Sunday, October 14, 2018

১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তির আভাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জনমনে শঙ্কা

নিউজ ডেস্ক: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপিকে লাভবান করতে নতুন করে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিএনপিকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসানোর চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে এবার প্রধানমন্ত্রীকে পরোক্ষভাবে হত্যার হুমকি দিয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আভাস দিয়ে তিনি বর্তমান সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎ করে ডা. জাফরুল্লাহ’র এমন হুমকিকে শঙ্কিত হয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক যাত্রা ব্যাহত করার উসকানি বিবেচনায় তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন বিশিষ্টজনরা।
জানা গেছে, ৮ অক্টোবর (সোমবার) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ গণ সাংস্কৃতিক দলের (বাগসদ) উদ্যোগে আয়োজিত এক নাগরিক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিভীষিকাময় রাতের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে সরকার পতনের হুমকি দেন ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি দাবি করেছেন যে, ১৫ আগস্টের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রুখে দিয়ে বিপদগামীরা জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করবে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আপনি সাবধান হন। এমন কিছু করবেন না যাতে ৭৫ ফিরে আসে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ডা. জাফরুল্লাহ’র এমন উসকানিমূলক এবং অনৈতিক বক্তব্যের জেরে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সরকার যখন দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে দেশ ও দেশের বাইরে সমাদৃত হচ্ছে, ঠিক তখন ডা. জাফরুল্লাহ কী বুঝে বা কার নির্দেশে এমন অগ্রহণযোগ্য মতামত দিলেন, সেটি নিয়েও জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
তার এমন অগণতান্ত্রিক ও সরকার বিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্যে একটি অগণতান্ত্রিক শক্তির কণ্ঠস্বরের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ’র মতো একজন প্রবীণ ব্যক্তি কী কারণে হঠাৎ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিভীষিকাময় রাতের উদ্ধৃতি দিয়ে সরকার প্রধানকে হুঁশিয়ারি দিলেন, সেটি আমার বোধগম্য হয়নি। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে তৃতীয় শক্তি উত্থানের কোন সুযোগ নেই। এদেশের মানুষ সচেতন। তারা উন্নয়ন চায়। তারা গণতন্ত্র চায়। সেই হিসেবে ডা. জাফরুল্লাহ’র মতো ষড়যন্ত্রকারীদের অনৈতিক আশা পূরণ হবে না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে যখন উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি অবান্তর, অবাস্তব ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে মানুষের মনে নতুন করে ভীতির সঞ্চার করেছেন। ডা. জাফরুল্লাহ’র বক্তব্য সরাসরি রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র বিরোধী। তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।
ডা. জাফরুল্লাহ’র এমন আগাম অগণতান্ত্রিক আভাসের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ বিএনপির মনের কথা বলেছেন। বিএনপি যে গণতন্ত্র বিরোধী ও ক্ষমতালোভী দল সেটি ডা. জাফরুল্লাহ’র বক্তব্যে নতুন করে প্রমাণিত হলো। তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, বিএনপি-জামায়াত, রাষ্ট্র বিরোধী জোটরা গণতন্ত্রকে হত্যা করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন দেশের মানুষ পূরণ হতে দেবে না। ডা. জাফরুল্লাহ কার ভরসায় প্রধানমন্ত্রীকে এমন আগাম হুমকি দিলেন সেটি খুঁজে বের করা দরকার। কারা দেশকে আবারো স্বৈরশাসকদের আড্ডাস্থল বানাতে চায় সেটিও জানা দরকার। রাজনীতি করা, বক্তব্য দেওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনি আপনার বিরোধী মতকে হত্যা করার হুমকি দেবেন। বিএনপি যে ষড়যন্ত্রের কারখানা সেটি প্রমাণ হলো। আমি ডা. জাফরুল্লাহ’র বিচারের দাবি জানাই।
দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার ও রাষ্ট্রকে অরো বেশি সচেতন হতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নির্বাচনের অজুহাতে যেন কোনভাবেই অগণতান্ত্রিক তৃতীয় শক্তি বাংলাদেশের উপর ভর করে দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত না করতে পারে সেই বিষয়ে সরকারকে আরো বেশি সজাগ থাকতে হবে। রক্ত দিয়ে কেনা এই স্বাধীনতা যেন অন্যের ভোগ-বিলাসের বস্তুতে পরিণত না হয় সেদিকে সরকারকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি দেশ বিরোধী শক্তিকে রুখে দিতে পারলেই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

No comments:

Post a Comment