Friday, October 5, 2018

চারটি নদীর নাব্যতা উন্নয়নসহ ১৫ প্রকল্প অনুমোদন একনেকে

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আমাদের দেশের ভিতর বয়ে গেছে ছোট-বড় অনেক নদী। কিন্তু নানা কারণে দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে এসব নদী। এসব নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বর্তমান সরকার। পুরনো ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে একনেকে। নদীর নাব্যতা উন্নয়নসহ ১৫ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
একনেকের এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য ১৩ হাজার ২১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ব্যয়ের সরকারি তহবিল থেকে নেয়া হবে ৮ হাজার ৪৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৪৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪ হাজার ২৯০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে।
একনেকে এই প্রকল্পগুলোর আওতায় ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ১০০ মিটার প্রস্থে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ৩ মিটার গভীর করা হবে। ধরলা একটি সীমান্ত নদী যা প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মপুত্রের উপ নদী। নদীটি হিমালয়ের দক্ষিণ সিকিম থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীটি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদীতে পতিত হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় সম্পূর্ণ ধরলা নদী (দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৩৮ মিটার) ড্রেজিং করা হবে। দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জের একটি বিল থেকে উৎপন্ন তুলাই নদীটি ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টাঙ্গন নদীর ভারতীয় অংশে মিলিত হয়েছে। এ নদীর ৭০ কিলোমিটার ও ৩৮ মিটার প্রস্থে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এক দশমিক পাঁচ মিটার গভীর করে নৌ পথটি ক্লাস-৪ নেভিগেশনাল রুটে উন্নীত করা হবে তুলাই নদীর ৭০ কিলোমিটারে ৩৮ মিটার প্রস্থব্যাপী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ১ দশমিক ৫ মিটার গভীর রুটে উন্নীত করা হবে।
পুরনো ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (১ম পর্যায়) (তৃতীয় সংশোধিত), এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ২ হাজার ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙা-খাগড়াছড়ি সড়ক উন্নয়ন (চট্টগ্রাম অংশ)- খরচ হবে ৩৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর-ভিতরবন্দ-নাগেশ্বরী মহাসড়কের দুধকুমর নদীর ওপর সোনাহাট সেতু নির্মাণ- খরচ ২৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প- খরচ ২৮০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
মেঘনা নদীর ভাঙন হতে ভোলা জেলার সদর উপজেলাধীন রাজাপুর ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন রক্ষার্থে তীর সংরক্ষণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প- খরচ ৩৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ- খরচ ১৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (আরওএসসি)- দ্বিতীয় পর্যায় (দ্বিতীয় সংশোধিত)- খরচ ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ- খরচ ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন- খরচ ১৬৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন- গোপালগঞ্জ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের খরচ হবে ২৫০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচের উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একনেকের উন্নয়ন প্রক্রিয়া যাতে ধীর গতিতে না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রেক্ষিতে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য উন্নয়ন কাজে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। উন্নয়ন চলবে একই মাত্রায়, একই গতিতে’।
এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ফলে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে দেশের চারটি নদী পুনরায় প্রাণ ফিরে পাবে।

No comments:

Post a Comment