বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার এক ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠেছে
দেশদ্রোহী ও সুযোগসন্ধানী চিহ্নিত গোষ্ঠী। এর মাধ্যমে তারা এক ঢিলে
অনেকগুলো পাখি শিকারের চক্রান্ত করছে। দিবালোকের মতো স্পষ্ট একটি ঘটনায়
অহেতুক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আস্থার প্রতীক সেনাবাহিনীকে জড়ানোর
অপচেষ্টা হচ্ছে।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর বিরুদ্ধে অপহরণ ও
ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে গতকাল সাংবাদিক সম্মেলন করেন মিতালী চাকমা
নামে একজন কলেজছাত্রী। তিনি জানান, তিন মাস পূর্বে পাহাড়ি রাজনৈতিক সংগঠন
ইউপিডিএফ এর সদস্যরা অস্ত্রের মুখে তাকে অপহরণ করে।
রাঙামাটি সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রী জানান, আগস্টের ১৭
তারিখে বদিপুরস্থ তার নিজ বাসা থেকে তিনি অপহৃত হন। ইউপিডিএফে যোগদান করতে
রাজি না হওয়াতেই তাকে অপহরণ করা হয় বলেও জানান তিনি।
অপহরণকারীরা তাকে নির্জন ডলুছড়ি এলাকায় নিয়ে যায় এবং শারীরিক ও
মানসিকভাবে ব্যাপক নির্যাতন করে। টানা পাশবিক নির্যাতনে তিনি প্রচণ্ড
অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানান।
মিতালি চাকমা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ইউপিডিএফ কর্মীরা প্রথমে ধর্মঘর
এলাকায় পরে চিত্তলি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বন্দী করে রাখে এবং নানাভাবে
বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আমাকে ইউপিডিএফ দলে যোগ দিতে বলে। এভাবে ১৩ দিন থাকার
পর তারা তাদের নেতা অং মারমা ও শান্তিলাল চাকমার সাথে যোগাযোগ করে। তাদেরকে
বলাবলি করতে শুনেছি আমাকে গর্ভবতী না করলে আমি হয়তো ইউপিডিএফ এ যোগ দিতে
রাজি হবো না। এমতাবস্থায় গত ৩০-৮-১৮ তারিখ থেকে ১৯-১১-১৮ তারিখ পর্যন্ত
ইউপিডিএফ কর্মীরা আমাকে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার রেপ করে। ইউপিডিএফ কর্মীদের
শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। ভেঙ্গে
পড়ার পর আমি বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও পারিনি। আমার বন্দীদশার এক
পর্যায়ে গত ১৯ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে গভীর রাতে সেনাবাহিনীর টহলের শব্দ পেয়ে
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেনাবাহিনীর ভাইদের কাছে আমার দুর্দশার কথা খুলে বলি।
আমার দুর্দশার কথা জানার পর সেনাবাহিনীর টহল দল আমায় উদ্ধার করে
কোতয়ালী থানায় সোপর্দ করে। তারপর থানা থেকে আমাকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়।
ইউপিডিএফ আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেবে এবং আমার বাবা মা’র নিরাপত্তা নিয়ে আমি
খুব চিন্তিত আছি। ইউপিডিএফ আমার বাবা মাকে মেরে ফেলবে। তাই আমি আপনাদের
মাধ্যমে ইউপিডিএফ নেতাকর্মীদের ভয়ানক কাজের মুখোশ খুলে দিতে চাই এবং হাজার
বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার কাছে সাহায্য
ও বিচার চাই।’
অপহরণের ঘটনায় মিতালী চাকমা গত ২০ নভেম্বর ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে রাঙ্গামাটি থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে তৎপর
হয়ে উঠেছে একটি বিশেষ মহল। পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি নির্বাচনকে
সামনে রেখে সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্তে নেমেছে এই কুচক্রী মহল
।
সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে
একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকার একটি মেয়ের কাছ থেকে
স্থানীয়রা ইয়াবা উদ্ধার করছে। ভিডিওর সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দূরতম কোন
সম্পর্ক না থাকলেও গভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবে তাতে সেনাবাহিনীর নাম জুড়ে
দেয়া হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, কিছুটা সেনাবাহিনীর পোশাকের আদলে পোশাক পরিহিত একজন
সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু তার পরিহিত পোশাক মোটেই সেনাবাহিনীর নয়। এমনকি
ভিডিওতে তার মুখচ্ছবিও দেখা যাচ্ছে না। এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে,
গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ভিডিওটি করা হয়েছে।
আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী চাকমা সার্কেল চীফ
দেবাশীষ রায়ের স্ত্রী গত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে
বিলাইছড়ির দুই জন মারমা মেয়েকে ধর্ষণের বানোয়াট অভিযোগ নিয়ে অনেক সরব
ছিলেন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তথাকথিত ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত জানুয়ারি মাসে
একাধিক মানববন্ধনও করেছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায়ের স্ত্রী ইয়েন
ইয়েন। ওই ইস্যুকে ব্যবহার করে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে বেশ তৎপর ছিলেন
এই মুখোশধারী মানবাধিকারকর্মী। কিন্তু কোনো এক আশ্চর্যজনক কারণে সম্প্রতি
ইউপিডিএফ কতৃক ধর্ষিত মিতালী রাণী ইস্যুতে তিনি সম্পূর্ণ নীরব। ইউপিডিএফ
দ্বারা একজন চাকমা নারী টানা তিন মাস ধর্ষিত হলেও তিনি আজ অন্ধ-বধিরের
ভূমিকা পালন করছেন। নেই কোন সমাবেশ, বিবৃতি কিংবা ভাষণ।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে তবে কি সহজ সরল পাহাড়িদের ব্যবহার করে
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত চাকমা সার্কেল চীফ
দেবাশীষ ও তার স্ত্রী?
তাছাড়া পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অর্জনকে ম্লান করার জন্য পার্বত্য আঞ্চলিক
সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো বরাবরই সেনাবাহিনীকে নারীর শ্লীলতাহানির নানা ভুয়া
ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা করে। উল্লেখ্য সম্প্রতি চাঁদাবাজ ধরতে গিয়ে উপজাতীয়
নারীদের হাতে সেনাবাহিনী অপদস্ত হলেও যেখানে সেনারা কোন কিছুই করেনি,
সেখানে উপজাতীয় নারীদের নির্যাতন করার ঘটনা আষাঢ়ে গল্প ছাড়া যে কিছু নয় তা
বুঝতে অসুবিধে হয় না। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, সম্প্রতি সেনাবাহিনী কর্তৃক
পার্বত্য আঞ্চলিক দল সমূহের কিছু শীর্ষ চাঁদাবাজ ও খুনি ধরা পড়ায় এবং
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী যাতে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে না
পারে সেজন্য পাল্টা কৌশল হিসেবে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে
অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি কুচক্রী মহল।
তবে গর্বের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় যেসব কুচক্রী
মহল জড়িত তাদের অতি শীঘ্রই আইনের আওতায় নিয়ে তাদের মুখোশ খুলে দেয়ার দাবি
জানিয়েছে সাধারণ পাহাড়িরা। তাদের মতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের আস্থা ও
নির্ভরতার প্রতিষ্ঠান। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিরক্ষায় সেনাবাহিনী অবদান
স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনাদলের অবদান
সর্বোচ্চ মানের প্রশংসিত। তাই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে কোন চক্রান্ত
বাস্তবায়ন করতে দেবে না সাধারণ পাহাড়িরা।