নিউজ ডেস্ক: বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে তারেক রহমানের পলাতক জীবনের অনিশ্চয়তা বিবেচনা করে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক জোট গঠন করার জন্য গোপনে ড. কামাল, আ. স. ম. আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে বৈঠক করেছিলেন বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থানরত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে কথা
হলে তিনি বলেন, বিএনপির বিকল্প একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করে আওয়ামী
লীগ সরকারের পতন ঘটাতে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ড. কামালদের সব
ধরণের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন এস কে সিনহা।
শমসের মবিন চৌধুরী আরো বলেন, মূলত এস কে সিনহার প্ররোচণা ও প্রলোভনে পড়ে
সরকারের পতন ঘটাতে দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে নবগঠিত
ঐক্যফ্রন্ট। মূলত জুডিশিয়াল ক্যু করে তৃতীয়পক্ষকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করিয়ে
দিতে ব্যর্থ এস কে সিনহা আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর কঠিন প্রতিশোধ নিতে দেশ
ছেড়ে যাওয়ার আগে এই ষড়যন্ত্র করেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মামলার
সম্ভাব্য রায় ও তারেক রহমানের পলাতক জীবনের বিষয়টি মাথায় রেখে এস কে সিনহা
এমন ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
ড. কামালের মতিঝিল চেম্বার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর
রাতে চেম্বারে বৈঠকে বসেন এস কে সিনহা, ড. কামাল, রব, মান্না ও ডা.
জাফরুল্লাহ। এসময় বিএনপির সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যর্থতা, নেতৃত্ব সংকট,
অজনপ্রিয়তা এবং দুর্নীতির বিষয়ে বিশদ আলোচনা করে সরকারকে নির্বাচনের পূর্বে
রাজনৈতিক চাপে ফেলতে বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করার প্রস্তাব দেন
সাবেক এই বিচারপতি। এস কে সিনহার প্রস্তাব ছিল, বিএনপি ব্যর্থ হলেও তাদের
জনবল রয়েছে। এছাড়া জামায়াত নির্বাচনের পূর্বে বিএনপির সাথে একত্রিত হয়ে
যাবে। সুতরাং রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া বিএনপি-জামায়াতের জনবল ব্যবহার করে
বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করার বিষয়ে ড. কামালদের অনুরোধ করেন এস কে
সিনহা। জোটের সামনে থাকবেন ড. কামাল এবং পেছন থেকে তাকে সব ধরণের সুবিধা
দেবে বিএনপি-জামায়াত।
এছাড়া ড. কামালদের বিদেশি সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করে দিতে তিনি নিজেই
সহায়তা করবেন বলে ওয়াদা করেন। সরকার বিরোধী আন্দোলনে ড. কামালদের লজিস্টিক
সাপোর্ট ও বিদেশি ফান্ড ম্যানেজ করে দেওয়ার বিষয়েও কথা দেন এস কে সিনহা।
এসময় ড. কামাল জামায়াত প্রসঙ্গ তুললে এস কে সিনহা বৃহত্তর স্বার্থ আদায়ে
দেশের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি চিহ্নিতকরণ বাদ দিয়ে মাঠে নেমে পড়ার পরামর্শ দেন।
পাশাপাশি তিনি ড. কামালকে জামায়াত নিয়ে প্রকাশ্যে নেতিবাচক মন্তব্য করে
সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করারও পরামর্শ দেন। তবে ভেতরে ভেতরে জামায়াতকে
ধারণ করারও পরামর্শ দেন।
এস কে সিনহার মতে, বিএনপির আন্দোলনকে টিকিয়ে রেখেছে জামায়াত। সুতরাং
নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা এবং হিংসা ছড়ানোর জন্য বৃহত্তর জোটে জামায়াতের
অদৃশ্য অংশগ্রহণ জরুরি। এছাড়া এস কে সিনহা মিশনে সফল হলে আগামী সরকারের
প্রাথমিক রূপরেখারও চিত্র দেখান উপস্থিত নেতাদের। উক্ত চিত্রে ড. কামালকে
রাষ্ট্রপতি এবং খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর কথা উল্লেখ ছিল।
সূত্র বলছে, এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিলেট ও চট্টগ্রামের দুটি
সমাবেশে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন এস কে সিনহা। পাশাপাশি
ঐক্যফ্রন্টের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত দেশ ও
সংস্থার সমর্থন এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছেন।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের
সাবেক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঐক্যফ্রন্টকে ব্যবহার করে সাবেক
বিচারপতি এস কে সিনহা মূলত সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন ষড়যন্ত্র করেছেন।
নিজের ক্ষোভ মেটাতে এবং দেশের রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেই এস কে
সিনহা ঐক্যফ্রন্টকে যাবতীয় সহযোগিতা করছেন। খালেদা-তারেকের অনিশ্চয়তায় এস
কে সিনহার মদদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সূচনা হয়। অথচ এস কে সিনহার বিরুদ্ধে
মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি ও উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ১/১১ সরকারের
সময় বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকারি কোষাগারে জমাকৃত অর্থ
ফেরত মামলায় রায় প্রদানকালে ৬০ কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ করার অভিযোগ রয়েছে এস
কে সিনহার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এস কে
সিনহার বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগ করে মামলা দায়ের
করেছেন।
নির্বাচনের পূর্বে দেশে যদি কোনরকম অনাকাঙ্খিত পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং
কোনরকম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় তবে নিঃসন্দেহে এর জন্য এস কে সিনহা
প্রত্যক্ষভাবে এবং ড. কামালরা পরোক্ষভাবে দায়ী থাকবেন। দেশের স্বার্থে,
দশের স্বার্থে এসব ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করা উচিত
বলে আমি মনে করি।
No comments:
Post a Comment