Tuesday, October 16, 2018

২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় মা–ছেলে ছাড় পেলেন কেন?

বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং অন্য ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
তবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের ফাঁসি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ওই হামলায় আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা জেলার সহ-সভাপতি মাহবুবা পারভীন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার পর শাড়ী পরিহিত ও এক হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে ফুটপাতে এক নারীর ক্ষত বিক্ষত দেহ পড়ে থাকার যে ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল- সেটি মাহবুবা পারভীনের আহত হওয়ার ছবি।
একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ওই দিনের হামলায় আহত কামরাঙীর চরের মাহমুদা মনোয়ারা বেগম ও তার ছেলে সম্রাট আকবর সবুজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের শরীরে এখনও বোমার স্প্লিন্টার আছে। আমরা দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছি। এই ন্যাক্কারজনক হামলার মূল হোতা হলেন তারেক জিয়া। অথচ তাকেই ফাঁসির রায় না দিয়ে যাবজ্জীবন রায় দেয়া হলো। তার ফাঁসির রায় হলে আমরা খুশি হতাম’।
বর্তমানে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন ঢাকা মহানগরী বিএনপির সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ের দিন তার বাড়িতেই ছিল অন্তত ৫ জন বিএনপি কর্মী। নিউইয়র্ক সময় মধ্যরাতের পরে রায় ঘোষণা হয়।
রায় শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন সাদেক হোসেন খোকা। বলেন ‘বাবর আর পিন্টু তো তারেকের নির্দেশ পালন করেছেন মাত্র। নির্দেশ পালনের জন্য যদি ওদের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে নির্দেশ দাতার যাবজ্জীবন কীভাবে হয় বলো?’
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন খোকা। বলেন, ‘বেচারা পদত্যাগ করতে চেয়েছিল। তাকে দিয়ে এসব করাতে বাধ্য করানো হয়েছিল।’
এই রায়ে অবাক হয়েছেন বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ের মুখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দিকীও। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় ব্যস্ত এই সাবেক আমলা বলেন, ‘পরিকল্পনা যদি হাওয়া ভবনেই হয়, এটা প্রমাণিত হয়, আর তারেক যদি ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীই হন, তাহলে তো এই রায় একটু অবাক করেই বটে।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা রায়ের আরো একটি দুর্বল ঘোষণা হল ত‌ৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নির্দোষ বিবেচনা করা। যদিও সে সময়ে পুলিশের করা একটি তদন্ত রিপোর্টে ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে তারেক জিয়ার নাম দেখে সেই রিপোর্ট ছুড়ে ফেলে দেন।
এই ব্যাপারে ব্যারিষ্টার ড. তুহিন আফরোজ বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সচেষ্ট ষড়যন্ত্রের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা এটাও জেনেছি যে তদন্তেও আসামিদের জবানবন্দীতে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে শুধু তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর-ই হামলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। একই সাথে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা বেগম খালেদা জিয়াও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে জানতেন। তিনি নিজেও হামলার আলামত নষ্ট করার আদেশ দিয়েছিলেন এবং এ হামলা সম্পর্কে তদন্ত করতে নিষেধ করেছিলেন। তাহলে, আমাদের প্রশ্ন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সচেষ্ট ষড়যন্ত্রের কারণে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র-প্রতিমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে ছাড় দেয়া হল কেন’?

No comments:

Post a Comment