Tuesday, March 5, 2019

‘বঙ্গবন্ধু’ একটি ইতিহাসের নাম

নিউজ ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৭ মার্চ ২০১৯। এক মহামানবের ৯৯ তম জন্মদিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলার রূপকার, হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলার স্থপতি ও জাতির জনক। বিশ্বের আপামর মুক্তিকামী জনতার কণ্ঠস্বর শেখ মুজিবুর রহমান।
জন্ম: ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ। বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয়।
শিক্ষা জীবন: ১৯২৭ সালে গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনা শুরু। ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে এবং পরে স্থানীয় মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে লেখাপড়ায় সাময়িক বিরতি এবং ১৯৩৭ সালে পুনরায় ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স (S.S.C) পাশ করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে একই কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন তিনি। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে জরিমানা করে। তিনি এ আদেশ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন।
ব্যক্তি জীবন: ১৮ বছর বয়সে বেগম ফজিলাতুন্নেছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র শেখ জামাল, শেখ কামাল ও শেখ রাসেল।
রাজনীতি:
১৯৩৯ সালে ছাত্রলীগের জেলা ও প্রাদেশিক কাউন্সিলর হন।
১৯৪০ সালে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হন।
১৯৪২ সালে মুসলিম লীগের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সিরাজগঞ্জ সম্মেলনে যোগদান করেন।
১৯৪৩ সালে মুসলিম লীগের কাউন্সিলর হিসাবে All India Muslim League Council- এ যোগদান করেন।
১৯৪৫ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের জি.এস নির্বাচিত হন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন আইন পরিষদে ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে’ বলে ঘোষণা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদ জানান। ভাষা আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল এই প্রতিবাদ থেকেই। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালে জেলে থাকা অবস্থায় ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং ১৫ মে প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।
১৯৫৫ সালের ৫ জুন গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ রাখা হয় এবং তিনি পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড মন্ত্রী হন।
১৯৬৬ সালের ১ মার্চ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘৬ দফা দাবি’ পেশ করেন।
১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন।
১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারি পুনরায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলায় প্রত্যাবর্তন এবং ১২ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মৃত্যু: ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোরে। এই মহামানব তাঁর নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর কতিপয় পথভ্রষ্ট ও উচ্চাভিলাষী বিশ্বাসঘাতক অফিসারের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।

আটটি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার

টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকাকালীন এক অভূতপূর্ব উন্নয়নের দেখা পেয়েছে দেশের মানুষ যা আগের কোনো সরকারের আমলে দেখা যায়নি। এই তিন বছর কী হয়নি এই দেশে! বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মাসেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আরো অনেক কিছু। যা একসময় দেশের মানুষের কাছে স্বপ্নের মধ্যে ছিল, সে স্বপ্নগুলো এখন মানুষ বাস্তব রূপে দেখতে শুরু করেছে। কিছুদিন আগে শুরু হলো চট্টগ্রামের তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক নয়, সারাদেশ জুড়ে এই উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজশাহীতে আগামী ডিসেম্বরের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে জেলার প্রথম ফ্লাইওভার কিংবা উড়াল সেতু।
এদিকে এতো উন্নয়নের মাঝে নতুন করে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। রাজধানী ঢাকার উপর চাপ কমাতে রাজধানীর আশেপাশে আটটি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংসদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। 
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোপূর্বে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৪টি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের লক্ষ্যে পিপিপি পদ্ধতিতে প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জনসংখ্যার চাপ কমানোর জন্য  রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় নতুন আরো ৪টি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বংশী-ধামরাই স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন, ধলেশ্বরী-সিংগাইর স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন, ইছামতী-সিরাজদিখান স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন ও সাভার স্যাটেলাইট টাউনে হাইরাইজ এপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে।
এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৪টি স্যাটেলাইট সিটি বিশেষ করে ঢাকার উত্তরে ও দক্ষিণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২টি এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ঢাকার পশ্চিমে ও দক্ষিণে ২টি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে, কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন প্রকল্প, বন্যা প্রবাহ এলাকা, জলাশয় সংরক্ষণ ও কমপ্যাক্ট টাউনশিপ কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন প্রকল্প, ঢাকা দক্ষিণে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প ও ঢাকার পশ্চিমে সাভার উপজেলায় আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প।
উল্লেখিত এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অচিরেই নিরসন হবে ঢাকার আবাসন সমস্যা, এমনটাই মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত জামায়াত!

নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে প্রকাশ্যে বিভাজিত হয়ে পড়েছে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। সূত্র বলছে, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদসহ শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা গ্রেফতার হলে নেতৃত্ব সংকটসহ নানা কারণে সংগঠনটির মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শূরার একজন সদস্য বলেন, দলীয় ফোরামে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর সময়ে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা তাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়াসহ সংস্কার প্রস্তাব দেন। পরে জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দলের তরুণ নেতৃত্বের একটি অংশ নতুন করে ওই প্রস্তাব ও আলোচনা সামনে আনে। এর আগে ২০০১ সালে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও ২০১০ সালে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কারাগার থেকে চিঠির মাধ্যমে প্রায় একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যা আমলে নেয়নি জামায়াতের কট্টরপন্থী নেতারা।
সূত্রমতে, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে তাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে মকবুল আহমাদ ও ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি গঠন সম্পূর্ণ লোক দেখানো পরিকল্পনা। নেতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ব্যারিস্টার রাজ্জাককে বর্তমান কমিটিতে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদ ঘোষণা দেওয়া হয়নি এটিও স্পষ্ট। তা নিয়ে তার অনুসারী আইনজীবীরা ওই সময়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে তার ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াত। জামায়াতের এক নেতা জানান, যদিও ওই সময়ে দলের গঠনতন্ত্র না মেনে আমির মকবুল আহমাদ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে মজলিশে শূরা সদস্য মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, মকবুল আহমাদ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়ার অধিকার রাখেন না। তাই দলীয় ফোরামে এই ভারপ্রাপ্ত আমিরকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। জামায়াতে যা হচ্ছে সব কিছুর জন্য দায়ী বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানই।
এদিকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলেও তা দৃশ্যমান না হওয়ায় বরাবরই দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ‘জামায়াত ঐক্যবদ্ধ’। দীর্ঘদিন ছাইচাপা দিয়ে রাখতে পারলেও দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবার প্রকাশ্যে এসেছে। দলটির অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সংগঠন থেকে পদত্যাগ করার পরই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শুধু রাজ্জাকই নন, অনেক নেতাই এই দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন কারণে নিষ্ক্রিয় অথবা দল ছেড়ে দেবেন বলে তথ্য রয়েছে।
অবশ্য গণমাধ্যমকে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেছেন, নতুন কোনো দল তিনি গঠন করছেন না। দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের বিজয়ের পর তৎকালীন দলের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক একাত্তরের মূল্যায়ন ও ভুল স্বীকার করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব দেন। সত্তর দশকের শেষভাগ থেকে যারা ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাদের অনেকের বিবেচনায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার জন্য জামায়াতের ভুল স্বীকার করা উচিত। এ অংশটি মনে করে, একাত্তরে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থাকার পরও তাদের ভুলের দায় আর বহন না করাই উত্তম। তারা মনে করেন, ২০০১ সালে দেওয়া ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের প্রস্তাব মানলে জামায়াতকে এত বড় বিপদের মুখে পড়তে হতো না। যদিও আবদুর রাজ্জাকই যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী ছিলেন।
যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ার ৫ দিনের মাথায় তিনি দেশ ছাড়েন। এ নিয়ে তখন নানা অভিযোগ উঠেছিল খোদ দলটির ভেতর থেকে।
তথ্যসূত্র বলছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রায় ৯ বছর আগে, ২০১০ সালে গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিন পর কারাগার থেকে দেওয়া এক চিঠিতে প্রস্তাব করেছিলেন, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন দায়িত্বশীলদের হাতে জামায়াতকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি একাধিক বিকল্পের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী নামও বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারসহ তখনকার সিনিয়র নেতাদের বাধার কারণে সেটা আর এগোয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত জামায়াত এখন অস্তিত্ব সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে বলেই মনে করছেন দলটির সাধারণ কর্মীরা।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ যেভাবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেলো

নিউজ ডেস্ক: ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ডস ডক্যুমেন্টরি হেরিটেজ) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেওয়া বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রেরণাদায়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সংস্থাটির তৎকালীন মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী তথ্যচিত্রের তালিকা ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্তের ঘোষণা দেন। এ সংক্রান্ত তালিকাভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি (আইএসি)। ২০১৭ সালের ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত বৈঠক করে এই কমিটি। এই কমিটিতে ছিলেন ১৫ জন বিশেষজ্ঞ। তারা ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
অ্যাডভাইজরি কমিটি ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এমওডব্লিউ) কর্মসূচির অধীনে আন্তর্জাতিক তালিকায় (ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার) মোট ৭৮টি দলিলকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ তালিকায় ৪৮ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে স্থান পায়। এ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ আন্তর্জাতিক দলিলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত ঐতিহ্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২৭টি।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর দেওয়া স্বীকৃতির নেপথ্যে রয়েছেন ইডেন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রোকেয়া খাতুন। প্রায় সাত বছর আগে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ তিনিই প্রথম ইউনেস্কোয় তুলে ধরেন। একটি জাতি কী করে এক জাদুকরি ভাষণেই একটি দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারে, সেটাই উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে প্রেষণে বদলি হয়ে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোয়। ২০১১ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় কোরিয়ান ইউনেস্কো আয়োজিত ‘সেকেন্ড রিজিওনাল ট্রেনিং ওয়ার্কশপ অন দ্য ইউনেস্কো, মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’- এ বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন রোকেয়া। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ঐতিহ্যগত গুরুত্ব আছে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে বাংলাদেশের এমন গুরুত্বপূর্ণ নথি বা প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপনের। তিনি এমন কিছু তুলে ধরার পরিকল্পনা করেন, যা সত্যিকারভাবেই বিশ্বে ভিন্ন এক স্বীকৃতি লাভ করতে পারে। আর সেটি হলো বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। ইউনেস্কোর তালিকায় ঠাঁই পেতেও সে ভাষণের রয়েছে পর্যাপ্ত গ্রহণযোগ্যতা ও ঐতিহাসিক প্রভাব। এরপর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে রোকেয়া যোগ দেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় কোরিয়ান ইউনেস্কো আয়োজিত ‘ইউনেস্কো মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ডে’। অধ্যাপক রোকেয়া সেখানে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় ৭ মার্চের ভাষণ ও তার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেছিলেন। এরপর গত দুবছর ধরে বর্তমান সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি আদায় সম্ভব হয়।
আন্তর্জাতিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে- এমন বিষয়গুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়। এই তালিকায় ঠাঁই পেতে হলে পর্যাপ্ত গ্রহণযোগ্যতা ও ঐতিহাসিক প্রভাব থাকতে হয়। ১৯৯২ সালে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম চালু করে ইউনেস্কো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দালিলিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সচেতনতার তাগিদে এটি চালু হয়।
৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা। ভাষণটি পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম ভাষণ হিসেবে বিশ্বের ইতিহাসে অনেক আগেই স্থান করে নিয়েছে। এই ভাষণকে ইউনেস্কো ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ঘোষণা করায় তা আরও পূর্ণতা পেল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ তাই আজ বিশ্বের সকল মানুষের সম্পদ।

দল পরিবর্তন করলেও ছাড় পাবে না জামায়াত নেতারা

নিউজ ডেস্ক: যুদ্ধাপরাধ এবং এর দায় থেকে মুক্তি পেতে জামায়াতে ইসলামী নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে রাজনীতিতে আসতে সচেষ্ট হলেও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নেতিবাচক ভূমিকার দায় থেকে সহসাই মুক্তি মিলছে না তাদের। যে নামেই তারা রাজনীতিতে ফিরে আসুক না কেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জামায়াতে ইসলামী যে রূপেই আসুক না কেন, তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর যেসব নেতারা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো আদালতে তাদের জবাবদিহি করতেই হবে।
জামায়াতে ইসলামীর সকল নেতাদের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, অভিযোগ নেই এমন নেতারাও যদি নতুন দল গঠনের চেষ্টা করে, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে এমন প্রেক্ষাপটে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা এ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। তারা সন্দিহান প্রকাশ করে বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের দল বলে কী এই আইনের আওতায় তারাও জড়িয়ে পড়তে পারে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর একজন আমির সন্ত্রস্ত কণ্ঠে বলেন, আমি জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে বিশ্বাসী। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বিশ্বাস থেকেই জামায়াতে ইসলামী করি। কিন্তু আমি যুদ্ধাপরাধকে সমর্থন করি না। বরং আমি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী। কিন্তু যদি কেবল জামায়াতের রাজনীতি করার জন্য শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হয় সেটি নিয়ে দলের অনেকেই সন্ত্রস্ত। আমরা বিষয়টি নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সরকার যেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন।