গত বছর আগস্ট মাসে প্রাণ বাঁচানোর জন্য আমাদের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে
আশ্রয় নেয় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের সামরিক অভিযানে প্রাণ নিয়ে
রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা পাড়ি জমায় এক অচেনা দেশে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে।
এসময় তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং এ
দেশের জনগণ।
১০ লাখ মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়। এক কাপড়ে আসা এই রোহিঙ্গা
উদ্বাস্তুদের জন্য জামা কাপড় নিয়ে এগিয়ে আসে দেশের জনগণ। ধীরে ধীরে তাদের
খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সাথে চিকিৎসার জন্যও করা হয় ক্যাম্প।
এই ভাগ্যাহত মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুত মেঘনার বুক চিরে জেগে
ওঠা ভাসানচর। এক কালের কুখ্যাত ও জনমানবশূন্য ঠেঙ্গারচর অঞ্চলটি বর্তমানে
ভাসানচর নামে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ আলোচিত। আগে
সমুদ্রের জেলেরা সাময়িক বিশ্রামের জন্য চরটিকে বেছে নিত। তাছাড়া শুষ্ক
মৌসুমে হাতে গোনা কিছু গবাদিপশুর বিচরণ ছাড়া সাধারণ মানুষ এ চরটি সম্পর্কে
কিছুই জানত না। অবশেষে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আগত প্রায় ১০ লক্ষ
রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঠিকানা হতে যাচ্ছে সেই ভাসানচরেই।
নোয়াখালীর উপকূলীয় হাতিয়া উপজেলার মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা ভাসানচর
রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য এখন প্রস্তুত। রোহিঙ্গাদের জন্য বেড়িবাঁধ,
বাসস্থান, সাইক্লোন শেল্টার, মসজিদ, অভ্যন্তরীণ সড়ক, লাইট হাউসসহ প্রকল্পের
কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নোয়াখালীর চরটির দৈর্ঘ্য
১২ কিমি এবং প্রস্থ ১৪ কিমি। এখানে ৯ মাস ধরে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার
শ্রমিক কাজ করছে। তাদের জন্য তৈরী করা হয়েছে ভূমি থেকে ৪ ফুট উঁচু ১ হাজার
৪৪০টি টিনশেড পাকা ঘর। বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে বিশাল এ চরে নির্মাণ
করা হয়েছে থাকার ঘর, খেলার মাঠ, পুকুর, মসজিদ, হাসপাতাল, সড়ক, লাইট হাউস,
গার্ডেন, সাইক্লোন শেল্টার, সোলার সিস্টেমসহ আনুষঙ্গিক অনেক কিছু। প্রতিটি
শেডে রয়েছে ১৮টি রুম। শেডের দুই পাশে থাকছে বাথরুম আর কিচেন। প্রতি ৪
সদস্যবিশিষ্ট পরিবারকে দেওয়া হবে একটি করে রুম। প্রতি রুমে থাকছে
দোতলাবিশিষ্ট ২টি বেড।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিরাপদে থাকার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে চার তলা
বিশিষ্ট ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার। চরটিকে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করার
জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ১৪ কি.মি. বেড়িবাঁধ। নির্মাণ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ
সড়ক, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, হেলিপ্যাড, চ্যানেল মার্কিং, লাইন হাউজ, বোট
ল্যান্ডিং সাইট, রাডার স্টেশন।
দ্রুত গতিতে এই পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। কাজ দ্রুত
শেষ করার লক্ষ্য উদ্বাস্তদেরকে দ্র্রুত কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর
করা। গত ৯ মাস যাবত প্রতিদিন ২০ হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করছে।
প্রাথমিকভাবে এখানে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করা হবে।
রোহিঙ্গা আবাসন সঙ্কট নিরসনে আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ এর আওতায় সরকার ২৩১২ কোটি
টাকা বরাদ্দ দেয়। কক্সবাজারে স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা ও পরিবেশের উপর বিরূপ
প্রভাব পড়লেও ভাসানচর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হবার সুবাদে রোহিঙ্গারা কোনো প্রভাব
ফেলতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর
সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে প্রকল্পটির কাজ চলছে। প্রকল্পটির ৮০ শতাংশ কাজ
ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই মাসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে
উদ্বোধন করা হবে এই প্রকল্পটি।
নিজের দেশের জনসংখ্যার চাপ মাথায় নিয়েও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বিপুল সংখ্যক এই রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেয়ার জন্য পিছপা হননি। এজন্য বিশ্ব
তাঁকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধি প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরে
রোহিঙ্গা পুনর্বাসন এবং জাহাইজ্যার চরকে স্বর্ণদ্বীপে রূপান্তরে যে সাহসী
ভূমিকা রেখেছেন তা ইতিহাসে বিরল।
No comments:
Post a Comment