নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সাংবাদিক সোহরাব হাসান `কবিতা খানমের
সংবিধান পাঠ` শিরোনামে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশ করেছেন। তিনি
ব্যক্তিগতভাবে দলীয় মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য কবিতা খানমকে প্রশ্নবিদ্ধ
করার চেষ্টা করেছেন।
সম্প্রতি সোহরাব হাসান লিখেছেন, `নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে
দলীয় রাজনীতি ঢুকে পড়েছে`। তবে গত বছরের শুরুতে নির্বাচন কমিশন গঠন করার
জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
দলগুলোর কাছ থেকে নামও নেওয়া হয়েছিল। বিএনপি মাহবুব তালুকদারের নাম
দিয়েছিল। পরে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ১০টি নাম নিয়ে সেখান থেকে ৫ সদস্যের
কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে মাহবুব তালুকদারকেও রাখা হয়. তাহলে
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণ হলো কোথায়?
দেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন এর জন্য নিবন্ধিত প্রতিটি রাজনৈতিক
দলকে পাঁচ জন করে নাম প্রস্তাবের জন্য আহবান করে সার্চ কমিটি। বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত ১২৫ জনের মধ্যে থেকে সার্চ কমিটি ১০ জনকে বাছাই
করে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত ভাবে ৫ জনকে নির্বাচিত করেন। এই ৫ জন
এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন কে এম নুরুল হুদা। বাকি ৪ জন হলেন-
মাহবুব তালুকদার, শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী, কবিতা খানম, মো. রফিকুল ইসলাম।
গত ১৫ অক্টোবর, সোমবার সকাল ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন
কমিশন ভবনে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সভা শুরুর ১০ মিনিটের মাথায়
সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। তবে বাকি তিন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল
ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে নিয়ে বৈঠক চালিয়ে যান সিইসি
নূরুল হুদা। বিএনপির তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশনার হওয়া সাবেক অতিরিক্ত
সচিব এই মাহবুব তালুকদার তার দেয়া প্রস্তাবগুলো মেনে না নেয়ায় নোট অফ
ডিসেন্ট দিয়ে বেরিয়ে যান। মাহবুব তালুকদারের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে সভা
ত্যাগ করার বিষয়ে কবিতা খানম বলেন, নোট অব ডিসেন্ট হয় কোনো সিদ্ধান্তের
বিরুদ্ধে। কিন্তু সেদিন কমিশনের সভায় কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। সুতরাং মাহবুব
তালুকদার যা দিয়েছেন সেটিকে নোট অব ডিসেন্ট বলা যাবে না।
‘বাকস্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে না’- মাহবুব তালুকদারের এ বক্তব্য ও সভা
বর্জন প্রসঙ্গে কবিতা বলেন, ‘আমি এটা মনে করি না। নোট অব ডিসেন্ট যে কেউ
যেকোন সময় দিতে পারে। আমি বলবো যে এটা একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং
এখানে ৫ জন মিলেই একটা বডি। যেকোন মেম্বার যেকোন সময় যেকোন বিষয়ে ভিন্নমত
দিতে পারেন। মনে করি না যে, মত বিরোধের কারণে কমিশনে দ্বিধা বিভক্তি সৃষ্টি
হয়েছে। কমিশনের ঐক্য নষ্ট হয়েছে। যেকোনো একটা বিষয়ে মতবিরোধ বা নোট অব
ডিসেন্ট আমিও দিতে পারি। অনেক সময় দিচ্ছি। তবে এখন আমি বলতে চাই,
সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতেই কমিশনের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে’।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হয়, সেটা
সাংবিধানিকভাবেই স্বীকৃত। মাহবুব তালুকদার এর এই অযৌক্তিক প্রস্তাব এর সাথে
বাকি ৪ জনের কেউই একমত হননি।
মাহবুব তালুকদার যে প্রস্তাবগুলো রেখেছিলেন তার মধ্যে একটি প্রস্তাব
ছিলো- নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। বিশ্বায়নের এই যুগে দেশ
ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে। আমরা কেন এখনো মান্ধাতার আমলের সিল ব্যবহার করবো?
সুশীল সমাজ তার এ প্রস্তাব এর কঠোর সমালোচনা জানান।
সোহরাব হাসান সম্প্রতি হয়ে যাওয়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে
প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেছেন. ‘রঙ্গ দেখানোর নির্বাচন করেছে নির্বাচন কমিশন, তবে
গত সিটি নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয়েছে তা বিদেশি গণমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে।
সোহরাব হাসান তার এ লেখার মাধ্যমে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ
করার চেষ্টা করেছেন। তার এ লেখা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
No comments:
Post a Comment