Sunday, October 14, 2018

তারেকের কারণে গ্রহণযোগ্যতা সংকটে বিএনপি, সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা

নিউজ ডেস্ক: যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত লণ্ডনে নির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বিএনপির মূল কান্ডারির ভূমিকায় থাকায় দলে গ্রহণযোগ্যতার সংকট তৈরি হয়েছে। তার উচিত দলের মূল কান্ডারির পদ থেকে এখনই সরে দাঁড়ানো বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক মহলে এ প্রশ্ন বহু পুরনো যে, বিএনপি কেবল সরকারের পরিবর্তন চায়, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নয়। তাই বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অধীনে একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো রাজনৈতিক নেতা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যানের পদে আসীন থাকা মোটেই সমীচীন নয়। যা গ্রহণযোগ্যতার সংকট তৈরি করেছে। এ সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দীর্ঘদিন থেকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এবং সেগুলোতে তার জড়িত থাকার প্রমাণও লোকসম্মুখে উন্মোচিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি তৎপরতায় তারেক রহমানের যোগসূত্রের খবরও সকলেরই জানা। তবে সবচেয়ে সুস্পষ্ট ও জঘন্যতম অপরাধ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। হাওয়া ভবনে বসে তারেক রহমানের এ হামলার পরিকল্পনা বিষয়ে যাবতীয় তথ্য মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে উঠে আসার পর দরুণভাবে সমালোচিত হন তারেক। ১০ অক্টোবর সেই হামলার  রায়ে তারেক রহমানের দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় বিশ্বমিডিয়ায় তা প্রকাশ পাওয়ার পর তারেক রহমানের অগ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়েছে।
সূত্র বলছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বহিঃরাষ্ট্রের সমর্থন পেতে বিএনপি পর পর বিভিন্ন রাষ্ট্র সফর করেছে। এরমধ্যে প্রধানতম অবস্থায় আছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রই বিএনপিকে সমর্থন জানাতে রাজি হয়নি। এমনকি বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসংঘের দ্বারস্থ হলে জাতিসংঘ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না জাতিসংঘ। সুতরাং বিএনপিকে কোনো সহযোগিতাই করতে পারবে না জাতিসংঘ। তবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের নাখোশ মনোভাবের কারণ হিসেবে অড়ালে উচ্চারিত হয়েছে তারেক রহমানের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এবং বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক। সর্বশেষ গ্রেনেড হামলার রায় তারেক রহমানের সে অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গ্রেনেড হামলা ও তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের জড়িত থাকায় তাদের দণ্ডাদেশ ঘৃণাভরে উচ্চারিত হয়েছে। আর এর ফলে বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আন্তর্জাতিক আস্থার সঙ্কটে পড়েছে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা দলের অবস্থান তুলে ধরে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠক করেছে। আলোচনাগুলোতে বিএনপি তাদের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আর তাদের ব্যর্থতার পেছনে নেপথ্যের কারণ হিসেবে উচ্চারিত হয়েছে তারেক রহমানের নাম। ফলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে তার দণ্ডিত হওয়ার বিষয়টি সে বাধাকে আরও জটিল করবে এটাই স্বাভাবিক। একজন পার্টি প্রধান যদি বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত হয়ে ফেরারি জীবন যাপন করে তবে দলের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাবে এটা শতভাগ নিশ্চিত। যা বিএনপির বেলায় দেখছি।
এদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধপত্র পাঠাবে সরকার। এ বিষয়ে জোরপদক্ষেপ চালানো হচ্ছে। যদি তাকে দেশে ফিরিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় তবে বিএনপির আন্তর্জাতিক সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

No comments:

Post a Comment