Wednesday, October 31, 2018

হাসপাতাল বিল নয়, পারিবারিক কলহের জের ধরে মা-ছেলের আত্মহত্যা

গত উনিশ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকের ছাদ থেকে চার দিনের ছেলেসহ ষোল বছর বয়সী সীমা আক্তার নামে এক গৃহবধূ লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিলের জন্য চাপ সৃষ্টি করায় তিনি সন্তানসহ আত্মহত্যা করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ১নং ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর উসমান গণি এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকরা ঘটনা অনুসন্ধান করে সবাইকে জানান সীমা আক্তারের স্বামী মনির মিঞা লেবানন থাকেন। তারা স্বচ্ছল। হাসপাতাল বিলের টাকার জন্য আত্মহত্যার ঘটনাটি সঠিক নয়।
তারা আরো জানান, ল্যাবএইড হাসপাতাল নয়, সীমা জেলরোডের লাইফ কেয়ার জেনারেল ও শিশু হাসপাতালে ১৬ তারিখ সন্ধা ছয়টার দিকে ভর্তি হতে আসেন। প্রসব বেদনায় কাতর সীমার সাথে ছিলেন তার ননদ নুরুন্নাহার। ১০০ টাকা ভর্তি ফি দিয়ে তারা ৩ তলার ৩০২ নং কেবিনে ওঠেন। রাত আটটার দিকে সার্জারির মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন সীমা। পরদিন দুপুরের দিকে সীমার মা আসলে তার হাতে ১৭০০ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ননদ চলে যান। বিকালের দিকে দেবর শাহীন এসে অনেকটা সময় ছিলেন। তারপর দিন সকালে আবার দেবর আসলে সীমার মা চলে যান। সন্ধার দিকে শাহীনও চলে যান।
ফরিদা খাতুন নামে সীমার পাশের বেডের (৩০৩) এক রোগীর স্বজন জানান, ভর্তির হওয়ার পর থেকেই সীমা মোবাইলে মনির নামে কারো সাথে সন্তানের জন্ম নিয়ে ঝগড়া করতেন। ননদের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও করতেন। সীমাকে কখনও কান্নাকাটি করতে আবার কখনো ঝগড়া করতেও দেখা গেছে। আত্মহত্যার আগের দিন রাতে বাচ্চাটি দুধের জন্য কান্নাকাটি করছিল। ঐ রাতে ফোনে সীমা বারবার বলছিলেন- ‘বাচ্চাকে দুধ দিতে হবে না, সকালে দেখবা আমি কী করি’।
সাংবাদিকরা সীমার দাদী আমেনা বেগমের সাথে কথা বলে জানতে পারেন লেবানন প্রবাসী মনির হোসেনের সঙ্গে গত বছর বিয়ে হয়। স্বামী মনির বিদেশ থেকে নিজের ছোট বোন নূরুন্নাহার এর কাছে টাকা পাঠাত। এ নিয়ে সীমার সঙ্গে মনিরের প্রায়ই ঝগড়া হত। আর হাসপাতালে আত্মহত্যার ব্যপারে সীমার মা রেহেনা বেগম বলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা- পয়সার জন্য কোন চাপ দেয়নি।
অন্যদিকে সীমার স্বামী মনিরের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, সীমা সন্তান সম্ভবা হওয়ার পর থেকেই মনিরের সাথে দাম্পত্য কলহের শুরু হয়। তার কিছুদিন পরই মনির সীমার পরিবর্তে বোন নুরুন্নাহারের কাছ টাকা পাঠাতে শুরু করলে দুজনের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে।

No comments:

Post a Comment