Friday, December 21, 2018

হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেন গোলাম মাওলা রনি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হতে মনোনয়ন বঞ্চিত গোলাম মাওলা রনি ব্যাপক আলোচিত সমালোচিত। আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংসদ ২০০৮ সালে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি থেকে শুরু করে অনেক অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অল্প সময়ে প্রায় শূন্য দশা থেকে তিনি হয়ে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং চাঁদাবাজি-দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রমাণিত হওয়ার মধ্যেই বেসরকারী এক টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিককে মারধরের পর দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে জেল খাটেন সাবেক এই সাংসদ। জেলে বসে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত কাদের মোল্লার ‘উস্তা ভাজি’ নিয়ে বিশেষ কাব্য লিখা নিয়ে আবারো আলোচনায় আসেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক হাস্যরসের মাধ্যমে সমালোচিত হওয়া সাবেক এই সাংসদ আবারো আলোচনা সমালোচনায় আসেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দেন গোলাম মাওলা রনি।
বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করছেন এই নেতা। ঢাকা থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় গেলে সাধারণ মানুষ তাকে বর্জন করে। বেঈমান, দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে গলাচিপা পানপট্টি ইউনিয়নের মানুষ গোলাম মাওলা রনিকে সে এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহকারী রনিকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি বলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়। গলাচিপা, দশমিনার স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা গোলাম মাওলা রনিকে সুবিধাভোগী হিসেবে বিবেচনা করে নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো সহযোগিতা করছে না বলেও অভিযোগ ওঠে গোলাম মাওলা রনির তরফ হতে।
গত ১৫ ডিসেম্বর শনিবার গলাচিপা উপজেলায় গোলাম মাওলা রনির স্ত্রীর গাড়িতে হামলা হলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি ও তার স্ত্রী। এই ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সঠিক তদন্তের দাবি জানায়।
দলীয় তদন্ত ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় বিএনপি থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় সহযোগিতা না পেয়ে দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করতে নিজের লোক দ্বারা এই সাজানো হামলার ঘটনা ঘটান। তৃণমূল বিএনপির সহানুভূতি অর্জন ও মাঠ গরম করতে এই হামলার ঘটনা ঘটান যা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর পর তদন্তে উঠে আসে। চাপে পড়ে অবশেষে গোলাম মাওলা রনি নিজেই স্বীকার করেন এই হামলায় তার দলীয় লোকজন জড়িত।
প্রসঙ্গত, পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির মনোনীত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গোলাম মাওলা রনির স্ত্রী কামরুন্নাহার রুনুর গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে সম্প্রতি।
এ ঘটনার পরপরই গোলাম মাওলা রনি ও গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান খানের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। শনিবার তাদের এই কথোপকথন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
এর আগে রনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহার রুনুর নাকি গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেসময় তার স্ত্রী ও বোনের স্বর্ণালংকারও লুট হয়েছে। শনিবার নেতাকর্মীদের নিয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব মিয়ার বাড়ি থেকে ফেরার পথে রুনুর গাড়িতে এ হামলা হয় বলে রনি অভিযোগ করেছেন।
সেই হামলা চালায়, বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মামুনের সমর্থক সাহাবুদ্দিন, হালেম, সাইদ, সোহেলসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন মাইক্রোবাসে ইটপাটকেল মেরে ও গাড়ি ভাংচুর করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
গোলাম মাওলার রনির গাড়িতে হামলার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য শনিবার গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন গোলাম মাওলা রনি। ফোনে রনি শাহজাহান খানকে বলেন, হাজার হাজার কর্মী নিয়ে গলাচিপা থানায় উপস্থিত হয়ে, ভাঙচুরের সকল দায় ভার আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর ন্যস্ত করতে। তবে বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান খান পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হাসান মামুনের সমর্থক হওয়ায়, তিনি তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে দেন।
পূর্বাপর ঘটনাগুলোর কারণে বিএনপি নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণ রনিকে অপছন্দ করতেন। এছাড়াও তাকে বাইরে রেখে স্থানীয় বিএনপিতে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী একটি বলয়। এবার নিজ স্ত্রীর গাড়িতে হামলা করিয়ে বিরোধী পক্ষের নামে মামলা দেয়া হীন পরিকল্পনার খবর ফাঁস হওয়ায় এলাকায় ছিঃছিঃ রব উঠেছে। গুটিকয়েক নেতাকর্মীও তার পাশ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বলা চলে, গোলাম মাওলা রনি এখন অনেকটাই একা। অঢেল টাকা খরচ করেও কাউকেই তার পাশে আনতে পারছেন না। জনগণও রয়েছেন মুখ ফিরিয়ে। এতে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে, এবার নির্ঘাত জামানত হারাতে যাচ্ছেন দলবদলে পটু এ নেতা।

No comments:

Post a Comment