বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটকে ২০১২ সালে সম্প্রসারিত করে ১৮ দলীয়
জোট গঠন করেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে এতে আরও দু’টি দল যোগ
দেওয়ায় সেটি ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। কয়েকদিন আগে আরও তিনটি দল যোগ দিয়েছে
এই জোটে। সর্বশেষ জোটটিতে দলের সংখ্যা ২৩।
অপরদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের
গণফোরাম, আসম আব্দুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য,
বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ কয়েকটি দল নিয়ে নিয়ে
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করে বিএনপি।
২৩ দলীয় জোটে যেমন সবচেয়ে বড় শরিক দল বিএনপি, তেমনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেও
বড় শক্তি তারা। কিন্তু, এই দলের দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, তাদের একই গলায় দুই
মালা নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে। একদিকে দীর্ঘদিনের মিত্র ২০ দল। অন্যদিকে নতুন
জোট ঐক্যফ্রন্ট। দু’টি জোটকে নিয়েই ‘আলাদা’ ঘোষণায় ‘একইসঙ্গে’ নির্বাচনে
যাওয়ার কথা দিয়ে বিএনপি এখন পড়েছে আসন ভাগাভাগির সংকটে। কারণ ভোটের মাঠে
যতোটা না ক্ষমতাবান দুই জোটের শরিক দলগুলো, তার চেয়ে বেশি তারা ক্ষমতা
দেখায় আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে।
আবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শুরুতে ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যে আসা
নেতাদের অবস্থান ছিলো জামায়াতবিরোধী। পরবর্তীতে জোটে জামায়াতের থাকা না
থাকার বিষয় কিছুটা আড়ালে চলে গেলেও তা আবারও নতুন করে সামনে এসেছে। জানা
গেছে, যেহেতু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে
অংশগ্রহণ করছে তাই তারা চান না একই প্রতীকে জামায়াতও নির্বাচন করুক। এ নিয়ে
বিএনপি, জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
এছাড়া মনোনয়ন নিয়ে তারেকের হস্তক্ষেপ এবং তার মন মতো প্রার্থীকে বেঁছে
নেয়া, যে বেশি শক্তি-অর্থ দিয়ে তাকে খুশি করতে পারছে তাদের ক্ষেত্রে
অন্যান্য দলের প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে থাকা সহজ হচ্ছে। এতে করে যোগ্য
প্রার্থীরা মনোনয়ন পাচ্ছে না, ফলে অনেক বিএনপি নেতাসহ অন্যান্য দলের নেতারা
ক্ষোভে তাদের মনোনয়নপত্র উঠিয়ে নিচ্ছে বা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় থেকে
মনোনয়ন পায়নি বলে জমা দেয়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডন থেকে ভিডিও
কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সাক্ষাৎকারে যোগ দিচ্ছেন বলে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
জানিয়েছেন। জোট ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনায়
বসবে বিএনপি। আজ-কালের মধ্যেই এ বৈঠক হবে। জোট ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কিছু
আসনে এখনও সমঝোতা হয়নি। আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এগুলো চূড়ান্ত করা হবে। আসন্ন
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে রোববার সকাল থেকে গুলশানে
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে দলের
পার্লামেন্টারি বোর্ড।
এই সকল ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের জেরেই কিনা সবাইকে অবাক করে দিয়ে নির্বাচন
না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ড কামাল হোসেন এমনকি তার মেয়ে সারা হোসেনও
নির্বাচন করবেন না।
No comments:
Post a Comment