দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের পুরোনো দল বিএনপি। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের
হাত ধরে উৎপত্তি এই দলের। জিয়ার মৃত্যুর পর দলের হাল ধরে তার স্ত্রী খালেদা
জিয়া। দেশের সব জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে এই জিয়া পরিবারের কাউকে না
কাউকে অংশ নিতে দেখা গেছে। কিন্তু এরকমটা হলো না। দুর্নীতির লোভ সামলাতে
না পেরে ভেঙে পড়েছে দেশের রাজনৈতিক এই পরিবার। এই পরিবারের বড় ছেলে মামলার
দায়ে আজ লন্ডনে পলাতক। দেশে আসার কোনো ইঙ্গিতও দিচ্ছেন না তিনি। দুর্নীতি
মামলায় তার মা খালেদা জিয়া আজ কারাবন্দী। তিনি ছেলের মতোই দুর্নীতির দায়ে
রয়েছে কারাগারে আছেন। অর্থাৎ আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে থাকছে না জিয়া
পরিবার।
আসন্ন নির্বাচনে খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে নির্বাচন
করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। কারাদণ্ড ভোগ করার জন্য তার তিন আসনের
মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তাই একাদশ সংসদ নির্বাচনে খালেদার আর নির্বাচনে
অংশ নেয়া হচ্ছে না। তার পরিবর্তে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে লন্ডনে
অবস্থান করছেন তারেক। কিন্তু সেও নেই দেশে। আটক হওয়ার ভয়ে দেশে আসছে না।
এমনকি নির্বাচন উপলক্ষে অবৈধ উপায়ে টাকা সংগ্রহও করছেন তিনি। তারেকের
স্ত্রী জোবায়দা দলে অংশ নেয়ার জন্য দেশে আসছেন, এরকম খবর শোনা গেলেও দলীয়
অন্তঃকোন্দলের ঘোলাটে পানির ভেতর পড়ে তার আর দেশে আসা হয়নি তার। কাজেই
বর্তমানে জিয়া পরিবারের কেউ নেই আসন্ন নির্বাচনে।
অপরদিকে বিএনপির সাথে জোট বেঁধেছে নতুন দল ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের
প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন। কিন্তু তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।
বিএনপির প্রধান ও জোটের প্রধান কেউই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। আর এই
পরিস্থিতিতে সবাই বনের রাজা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর।
বিএনপির নেতাকর্মীদের ভেতর ক্ষমতার একটি অদৃশ্য লোভ ছিল খালেদা গ্রেফতার
হওয়ার পর থেকেই। নির্বাচনী মৌসুমে এই লোভ আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
বিভিন্ন বৈঠকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে সাধারণ প্রশ্ন করা হচ্ছে তা হলো
নির্বাচনে জয়ী হলে কে হচ্ছে দলের প্রধান ?
খালেদা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে আসছে
মির্জা ফখরুল। তার পরিবর্তে দেখা যায় মাঝে মাঝে রিজভীকেও। কাজেই ক্ষমতার
দৌড়ে পিছিয়ে নেই তারা। এ নিয়ে আছে দুই জনের ভেতর ঠান্ডা যুদ্ধ। এই যুদ্ধ
একটু উত্তপ্ত হলেই সৃষ্টি হয় অন্তঃকোন্দল। ফখরুলকে প্রধান করার জন্য দলে
রয়েছে অনেকের দ্বিমত। বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, মির্জা ফখরুল মহাসচিব,
দলের চেয়ারপারসন নন।
অপরদিকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশারফ
হোসেন ইতোমধ্যেই তার ঘনিষ্ঠদের কাছে নির্বাচনে জিতলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে
দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেছেন। বিএনপির মধ্যে তিনিই সবচেয়ে সিনিয়র নেতা যিনি
নির্বাচন করছেন। ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠ হলেও তারেক
জিয়ার সাথে তাঁর দূরত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা গোপন করেননি
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও। খালেদা তাকে পছন্দ না করলেও তারেক জিয়া তাকে
পছন্দ করেন। তারেকের সাথে লন্ডনে করছেন বেশ কিছু গোপন বৈঠক। এমনকি তারেককে
খুশি করার জন্য অর্থও দিয়েছেন তিনি।
ক্ষমতার লোভ তাড়া করে বেড়াচ্ছে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীদের।
কিন্তু এর ভেতর বেশ কিছু বিবেচ্য বিষয়ও রয়েছে। জয়ী না হলেও যদি দেশের
বিরোধী দল হিসেবে চিহ্নিত হয় তাহলেও দরকার হবে একজন বিরোধীদলের প্রধান। এখন
এই প্রধান পদ নিয়ে দলের অন্তঃকোন্দল কত দূর গড়ায় সেটাই দেখার বিষয়।
No comments:
Post a Comment