নিউজ ডেস্ক: বিশ্ববাজারে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির মূল্য পাঁচ শতাংশ কমেছে। এর ধাক্কায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণও এ বছর কমেছে শতকরা ৪০ শতাংশ। যার ফলে বাংলাদেশের এক টাকা সমান পাকিস্তানের ২ রুপি পরিসংখ্যান দাঁড়িয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান ধারা বজায় রাখতে পারায় বর্তমান সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশেষজ্ঞরা।
বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চলমান বছরগুলোতে বাণিজ্যে ভারসাম্য
আনতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ধারাবাহিকতায়
সম্প্রতি দেশটিতে ষষ্ঠবারের মতো ঘোষিত মুদ্রার অবমূল্যায়নের মুখে মুদ্রার
অবমূল্যায়ন হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন দেশটির বিশেষজ্ঞদের। প্রধানমন্ত্রী
ইমরান খানের সরকারের ১০০ দিন পূর্তির মধ্যেই দেশটির মুদ্রার মূল্যমানে এমন
ধ্বস নামলো। এরইমধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যে বিশাল অঙ্কের ঘাটতি সামলাতে স্টেট
ব্যাংক অব পাকিস্তান পরোক্ষভাবে বেশ কয়েকবার তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন
করেছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক আভাস দিচ্ছে, পাকিস্তানের
গেল অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমবে ১ শতাংশেরও
বেশি। চলতি অর্থবছরের শেষ অর্থাৎ আগামী বছরের জুনে তা ৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে
কমে হবে ৪ দশমিক শতাংশ।
এদিকে পাকিস্তানের বিপরীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারা চলমান থাকাকে
সরকারের ব্যাপক সফলতা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ড. আতিউর রহমান বলেন,
স্বাধীনতা পঞ্চাশ বছরের পূর্বেই বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক খাতে যে পরিমাণ
উন্নয়ন করেছে, সেটি অনেক দেশ এখন পর্যন্ত অর্জন করতে পারেনি। এই পাকিস্তান
এক সময়ে বাংলাদেশকে অবজ্ঞা, অবহেলা করতো। আজ সেই বাংলাদেশ সবক্ষেত্রে
পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
অহংকার করেই বলতে চাই, সুশাসন, দেশপ্রেম ও সঠিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করার
ফলে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত
বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.২৮ শতাংশ, যা পাকিস্তানের ৫.২৮ শতাংশ।
আবার সামাজিক অনেক অনেক সূচকে বন্ধুপ্রতিম ভারতের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
বলেছেন, মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাওয়া
বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন। অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে
পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। এর কারণ, পাকিস্তান
থেকে স্বাধীন হওয়া এদেশের বেশিরভাগ মানুষ দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বশীল।
দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩
শতাংশ। সেদেশে বিদ্যুতের তীব্র অভাব আছে। গ্যাস থাকলেও দাম নির্ধারণ নিয়ে
বিরোধ রয়েছে। পাকিস্তানে বৈষম্যও ব্যাপক। বাংলাদেশ মূলত মধ্যবিত্তের দেশ।
অবকাঠামো উন্নয়ন যতদূর সম্ভব করা হয়েছে। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ
প্রচুর পরিশ্রম করছেন। দেশ স্বাধীনের পর জিডিপিতে শিল্পের অবদান ছিল মাত্র ৭
শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিল্পের প্রসার ঘটেছে। সেই
সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। যত শিল্প বাড়বে তত মানুষের
কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সমৃদ্ধির একটা চক্র তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।
ফলে উচ্চহারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। সঙ্গে বেড়েছে দেশীয় মুদ্রার
আন্তর্জাতিক মূল্যমান। ভাবতেই আনন্দ লাগছে, বাংলাদেশের এক টাকা সমান
পাকিস্তানের ২ রুপি। এটি কেবল সরকারের নয়, ১৬ কোটি বাঙালির জন্যও গর্বের।
No comments:
Post a Comment