Sunday, December 2, 2018

জামায়াতকে চিনেছে ব্রিটিশ কংগ্রেসও

মুক্তিযুদ্ধের ৪৭ বছর পরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে আস্থা রাখতে পারেনি জামায়াত ইসলামী। এখনও তারা অন্তরে ‘পেয়ারে পাকিস্তান’কে লালন করে যাচ্ছে যত্নে।
বিএনপি জামায়াত শাসনামলে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার সব আয়োজনই সম্পন্ন করেছিলো দলটি। জঙ্গীবাদের ভয়াল থাবায় নরকের অন্ধকার নেমে আসে প্রিয় স্বদেশে। বাংলাদেশের বুকে পাথর হয়ে আসা সেই শাসনামলে ভূলুণ্ঠিত হতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, পদদলিত হতে থাকে রাষ্ট্রের চার মূলনীতি। পরম শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা হতে থাকেন লাঞ্চিত আর অপমানিত। অন্যদিকে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের গাড়িতে থাকে জাতীয় পতাকা।
বিপুল জনরায় নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে নেয়। দেশপ্রেমিক জনতার প্রাণের দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু হয়, রায় কার্যকর করা হয় শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের। স্বস্তি ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে। তবে অস্বস্তিতে পড়ে জামায়াতসহ দেশবিরোধী চক্র।
ভ্রান্ত মতবাদ ও জঙ্গীবাদে জড়িত থাকায় জামায়াত শিবিরকে ‘মুনাফেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ও দেশের ইসলামিক দলগুলো। দেশের বাহিরেও জামায়াত একটি ‘জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আনুষ্ঠানিকভাবেই দলটিকে জঙ্গীবাদের মদদদাতা ও সন্ত্রাসীদের দল আখ্যায়িত করেছে অসংখ্যবার।
এবার মার্কিন কংগ্রেসও আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মৌলবাদী সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দেশের স্থিতিশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য হুমকি উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারকে তাদের রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি বিল উত্থাপন করা হয়।
মার্কিন কংগ্রেসের দাফতরিক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ইন্ডিয়ানা স্টেটের কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংকস ‘বাংলাদেশে সক্রিয় ধর্ম-রাষ্ট্রিক সংগঠনগুলোর সৃষ্ট গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি হুমকির বিষয়ের উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক এ বিলটি গত ২০ নভেম্বর হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে উত্থাপন করেন। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী হাউস রেজুলেশন ১১৫৬ হাউস ফরেন এ্যাফেয়ার্স কমিটিতে রেফার করা হয়েছে। বিলটিতে ইউনাইটেড স্টেট এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড) ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সকল গ্রুপের সঙ্গে সব ধরনের অংশীদারিত্ব ও তহবিল ব্যবস্থাপনা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
বিলটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিগত নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। যার ফলে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৯৫টি হিন্দু বাড়ি ধ্বংস করা হয়। ৫৮৫টি দোকানে হামলা ও লুট এবং ১৬৯টি উপাসনালয় ভাঙচুর করা হয়। বিলটিতে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী কর্মীরা সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে উল্লেখ করে বিলটিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে সাড়া দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বিলটিতে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধে হতাহতদের কথা এবং বাংলাদেশ যে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চেতনার ওপর প্রতিষ্ঠিত তাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
বিলে বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘এই স্বাধীনতা অর্জিত হয় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু, এক কোটির বেশি মানুষের উদ্বাস্তু হওয়া ও দুই লাখ নারী ধর্ষিত হওয়ার বিনিময়ে। আর এর অনেক ঘটনা ঘটেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ইসলামপন্থী উগ্রবাদীদের হাতে।’ বিলটিতে বলা হয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর উপর্যুপরি হামলা ধর্মীয় অসহিংসতা বাড়াচ্ছে এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করছে।
এদিকে ফিলাডেলফিয়া ভিত্তিক থিংকট্যাংক মিডল ইস্ট ফোরাম (এমইএফ) এক বিবৃতিতে এ বিলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি উগ্র সংগঠন, যাদের সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। গত অক্টোবরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন হাইকোর্টের একটি আদেশ অনুযায়ী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে। ২০১৩ সালের আগস্টে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক চাঁদপুরী ও অপর ২৪ জনের দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। এ পিটিশনে তারা বলেন, জামায়াত একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না।

No comments:

Post a Comment