আন্ত:কোন্দলের ফাঁদে পড়েছে বিএনপি। কোনো কিছুতেই বিএনপির এই কোন্দল
কমছে না। বরং নির্বাচন সন্নিকটে হওয়ার সাথে সাথে এই কোন্দলও বেড়ে যাচ্ছে।
দলে কোন্দলের জন্যই মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন একাধিক বিদ্রোহী
প্রার্থী।
শুরু থেকেই বিএনপিতে নিত্যনতুন জটের অন্ত ছিলো না। দলের নেতাকর্মীদের
রয়েছে অবৈধ সম্পত্তির জট, টাকা আত্মসাতের জট, দুর্নীতির জট। মনোনয়ন
প্রদানের ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হয়েছে এই সমস্যা। বিএনপির একটি আসনের জন্য
মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন একাধিক প্রার্থী। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন
সব দিক বিবেচনা করে মনোনয়ন দিয়েছেন একজনকে। কিন্তু রেষারেষিপূর্ণ বিএনপির
প্রার্থীরা তা মেনে নেননি। অন্যান্য প্রার্থীরা যারা মনোনীত হননি তারা আর
মনোনয়নপত্র তুলে নেয়নি। ফলে বেশিরভাগ প্রার্থী বিদ্রোহীভাবে নির্বাচন করার
ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে মনোনীত প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর
অন্তঃকোন্দল পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভায় বিএনপির প্রতীক নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন
রেজাউল করীম। তিনি থানা বিএনপির সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর। তার বিপরীতে
‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে মনোনয়ন কিনেছেন বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী
বাদশাহ। তিনি পৌর বিএনপির সভাপতি। বাদশাহর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন জেলা
বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান। রেজাউলের
পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার
গোলাম মোস্তফা। জনপ্রিয়তায় বর্তমান মেয়র বাদশা এগিয়ে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো
জানিয়েছে। সাবেক দুই এমপির দ্বন্দ্বের কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীর সৃষ্টি
হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন আসনে সৃষ্টি হয়েছে চরম দ্বন্দ্ব।
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বিএনপির টিকিট পান কেন্দ্রীয় যুবদলের
সহ-সভাপতিকে এম আই খলিল। তার মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার কারণে তিনি দলের প্রতীক
সংবলিত চিঠি নিয়ে নিজ এলাকায় ফেরেন। কিন্তু শেষরাতে পাল্টে যায় মনোনয়ন
প্রার্থী। খলিলের বদলে বিএনপির মনোনয়ন পান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সমর্থক নাইম সরকার। কিন্তু দলের মনোনয়নপত্র নিয়ে
কুমিল্লায় যাওয়ার আগেই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন কে এম আই
খলিল। এই নিয়ে এলাকায় বিরাজ করে চরম উত্তেজনা।
জোর যার মুল্লুক তার পদ্ধতিতেও বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দলের
শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় রয়েছে অনেক নেতাকর্মী। দলের সেই
নেতাকর্মীদের বদৌলতেও মনোনয়ন পেয়েছেন অনেকে। এতে করে ছিটকে পড়েছে এলাকার
অনেক জনপ্রিয় নেতারা। ছিটকে পড়া নেতারা ও তাদের কর্মী সমর্থকরা এজন্য
বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিবে।
বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় চলেছিল টাকার খেলা। যে যত বেশি টাকা
দিয়ে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মীদের খুশি করতে পেরেছে, মনোনয়ন পত্রের
দৌড়ে সে তত বেশি এগিয়ে ছিল। কিন্তু এই টাকার খেলার কথা জেনে যায় দলের বাকি
নেতাকর্মীরা। আর তা জানতেই আগুনের ভেতর ঘি ঢালার মতো অবস্থা হয়।
বিএনপির নিজস্ব কৃতকর্মের জন্যই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পরিমাণ বেড়েছে।
বর্তমানে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য কোণঠাসা অবস্থায় বিএনপি।
No comments:
Post a Comment