নিউজ ডেস্ক : পটুয়াখালীর-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী গোলাম মাওলা
রনির স্ত্রী কামরুন্নাহার রুনুর গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটার পর,
প্রথমে আওয়ামী নেতাদের দায়ী করে তার (রনির) সাঙ্গ-পাঙ্গ দিয়ে গলাচিপা থানা
ঘেরাও করার ফোনালাপের ফাঁসের পরও সিইসিকে উক্ত ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে
দায়ী করে চিঠি পাঠান রনি।
চিঠিতে রনি লিখেন, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী পটুয়াখালী-৩ সংসদীয় আসনে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী। গত ১২ই
ডিসেম্বর আমি নির্বাচন উপলক্ষে সপরিবারে নির্বাচনী এলাকায় এসে এক ভীতিকর ও
প্রাণ সংহারী পরিবেশের মধ্যে পড়েছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা থানা-পুলিশ ও
প্রশাসনের সহায়তায় আমাকে সপরিবারে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিভিন্ন এলাকায়
বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা ভোটারদেরকে মারধর করছে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং স্থানীয়
নির্বাচনী অফিস গুলোতে অগ্নিসংযোগ করছে প্রকাশ্য। তারপর উল্টো মামলা করে
পুলিশ দিয়ে লোকজনকে গ্রেফতার করে চলেছে এবং অনেককে এলাকা ছাড়া করেছে।’
আমি শত চেষ্টা-তদ্বির করেও স্থানীয় প্রশাসন এবং ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের কোনো
সাহায্য তো দূরের কথা-ন্যূনতম সাড়া-শব্দ পাচ্ছি না। অবস্থা দৃশ্যে মনে
হচ্ছে- আপনার নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন গলাচিপা-দশমিনার আওয়ামী লীগ প্রার্থী যিনি
কি না আপনার ভাগিনা, তার যোগসাজশে এই জনপদে আমি ও আমার পরিবারের জন্য
অসংখ্য মৃত্যুফাঁদ পেতে রেখেছে।’
আপনার ভাগিনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা এলাকাতে ইতিহাসের ভয়াবহতম নির্বাচনী
সন্ত্রাস এবং মর্মান্তিক অমানবিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। তারা গত ১৫
ডিসেম্বর আমার স্ত্রীর গাড়িতে ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করেছে এবং গাড়ির মধ্যে
থাকা ১০ থেকে ১২ জন নারীকে লাঞ্ছিত করেছে। পুলিশ কোনো সাহায্য তো করেইনি
বরং উল্টা হুমকি-ধামকি দিয়ে আমার স্ত্রীসহ অন্যান্য মহিলাকে থানা থেকে বের
করে দিয়াছে।’
আপনার কথা বিশ্বাস করে আমার স্ত্রীর লন্ডন প্রবাসী বোন-ভগ্নিপতি, কিশোরী
কন্যা ও বালক পুত্রকে নিয়ে নির্বাচন করতে এসেছিল। আওয়ামী লীগের
নেতাকর্মীরা প্রতিদিন পালা করে আমার বাড়ির সামনে এসে তাণ্ডব চালায়-অশ্লীল
অঙ্গভঙ্গি করে এবং হুমকি-ধামকি দিয়ে থাকে, যার কারণে আমার পরিবারের সবাই
অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি এবং মৃত্যুভয়ে কাতরাচ্ছি।’
আপনি যদি চান যে, আপনার ভাগিনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন
তবে আমাকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করুন। আমি আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার
করতে ইচ্ছুক। আমার ও আমার পরিবারের যদি কিছু হয় তবে ব্যক্তিগতভাবে আপনি ও
আপনার ভাগিনা দায়ী থাকবেন।’
ইতি
মোঃ গোলাম মাওলা রনি
তাং ১৭-১২-১৮
মোঃ গোলাম মাওলা রনি
তাং ১৭-১২-১৮
ইসির নিকট গোলাম মাওলা রনির এমন চিঠির রেশ কাটতে না কাটতেই গোলাম মাওলা
রনির আরো একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস করে দেয় পটুয়াখালী,
গলাচিপা বিএনপির সদস্য নাজমুল ইসলাম। নাজমুল ইসলাম পটুয়াখালী বিএনপির
কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত হাসান মামুনের সমর্থক হওয়ায় কল রেকর্ডটি ফাঁস করে
দেন। যে কল রেকর্ডে গোলাম মাওলা রনি নাজমুল ইসলামের কাছে স্বীকার করেছেন যে
তার স্ত্রীর ওপর হামলার সঙ্গে বিএনপি সরাসরি জড়িত।
গোলাম মাওলা রনি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্দেশেই রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের
জন্য নিজেদের কোন্দলের কারণে ঘটে যাওয়া হামলার দায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের
উপর চাপিয়ে দেন। কিন্তু উপর্যুপরি ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সারাদেশ ব্যাপী
বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন ভণ্ডুলের ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হয়ে পড়েছে।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে হেরে যাবার ভয়ে এরূপ ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় আওয়ামী
লীগের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে বিএনপি। এভাবেই বিভিন্ন অপকৌশলের মাধ্যমে তারা
নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকেও
প্রশ্নবিদ্ধ করতে অনবরত কুৎসা বা অপবাদ রটিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ই ডিসেম্বর, শনিবার নেতাকর্মীদের নিয়ে পটুয়াখালীর
গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব মিয়ার বাড়ি থেকে
ফেরার পথে বিএনপি’র মনোনয়ন বঞ্চিত হাসান মামুনের সমর্থকদের দ্বারা গোলাম
মওলা রনি’র স্ত্রী কামরুন্নাহার রুনুর গাড়িতে হামলা হয়। পরবর্তীতে, এ
হামলার ঘটনাটি স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত করা হয়েছে মর্মে রনি
অভিযোগ করেন এবং স্ত্রীকে মারধোরসহ অলংকার লুটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে
থানায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ ১০০জনকে আসামী করে মামলার নির্দেশ দেন।
প্রয়োজনে হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে থানা ঘেরাও করার জন্যও তিনি নেতাকর্মীদের
আদেশ দেন এবং এ ঘটনার ফলে একটি রাজনৈতিক সুবিধা এসেছে বিধায় এর সদ্ব্যবহার
করতে তিনি নেতাকর্মীদের অনুপ্রাণিত করেন।
No comments:
Post a Comment