Tuesday, December 18, 2018

মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী বিএনপি নেতারা গ্রেফতার হলে আপত্তি নেই ফখরুলের, কর্মীদের ক্ষোভ

নিউজ ডেস্ক: সত্যকথনের জন্য বিএনপিতে অনেক নেতাই কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। এবার তাদের তালিকায় নাম উঠলো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। সম্প্রতি তিনি তার একটি বক্তব্যে বলেছেন, মাদক ব্যবসায়ী, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সম্পৃক্ত বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। সূত্র বলছে, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক দলীয় নেতা-কর্মী যাতে রাজনৈতিকভাবে গণ-গ্রেফতারের শিকার না হয় সেজন্য প্রয়োজনে দলের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক কারবারী ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতারে দলের পক্ষ হতে কোন আপত্তি থাকবেনা মর্মে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন রাজনৈতিক গ্রেফতার না এড়ালে নির্বাচনে দলের কোন কর্মী সমর্থককে প্রচারণায় পাওয়া যাবেনা। মনোনয়ন বাণিজ্যসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় দলের অবস্থা এমনিতেই শোচনীয়। তার উপর গণগ্রেফতারের আতঙ্কে নেতা কর্মীরা বাড়িঘরে যেতে পারছেননা। এজন্য তারেক রহমানের নির্দেশেই মহাসচিব মূলতঃ দলের কতিপয় চিহ্নিত দুস্কৃতিকারীদের অনেকটা বিপদে ফেলেই রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে একদিকে দলের প্রতি বিদেশী শক্তিসহ সাধারণ মানুষের আস্থার উন্নতি ঘটবে। পাশাপাশি গণগ্রেফতার এড়িয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ মসৃণ হবে।
মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের জের ধরে দলীয় নেতাকর্মীরা ফুঁসে উঠেছেন। তারা বলছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ধরণের বক্তব্য দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের বৈধতা দিচ্ছেন।
সূত্র বলছে, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে মাদক, সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। আবার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কালিমা অনেক আগে থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘাড়ে আছে। এমনকি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যাতেও পিছিয়ে নেই বিএনপি। দলের কারান্তরীণ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দণ্ডিত আসামি। ফলে এমন প্রেক্ষাপটে দলের মহাসচিব হয়ে পরিস্থিতির কথা বিবেচনা না করে তার সাংঘর্ষিক বক্তব্য কিছুতেই মানতে পারছে না দলের নেতাকর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ফখরুল সাহেব এমন অবিবেচকের মতো বক্তব্য দেবেন তা মেনে নেয়া যায় না। কেননা, এখন পর্যন্ত দুর্নীতির দায়ে আমাদের দলীয় প্রধান কারাগারে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দণ্ডিত। ফলে তিনি এমন বক্তব্য দিয়ে তারেক রহমানের গ্রেফতারকেও উস্কে দিয়েছেন। এমনকি নেত্রীর কারান্তরীণ হওয়াকে বৈধতা দিয়েছেন। এ নিয়ে দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা।
মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্য দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার নামে বেশ কিছু মামলা ঝুলছে। কয়েকটি মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও আছে। তার মানে আমাকে গ্রেফতার করলে সেটি বৈধ হবে? ফখরুল সাহেবের এমন বক্তব্য দলীয় আচরণ পরিপন্থী।
এদিকে বিএনপির তৃণমূল থেকে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসছে বলেও জানা গেছে। তারা বলছেন, বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে- সেগুলো ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে বিগত ১০ বছরে হওয়া। কেবল দলের জন্যই মামলা ঘাড়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে। যদি গ্রেফতার হই তবে এর দায়ভার কে নেবে?

No comments:

Post a Comment