Tuesday, December 18, 2018

শেষ বেলায় এসে ড. কামালকে বিশ্বাস করতে পারছে না বিএনপি

নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যের বৃহত্তম দল বিএনপিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় ঐক্যের নেতা ডা. কামালের প্রতি বিশ্বাসে চির ধরেছে দলটির নেতাদের। এর প্রেক্ষিতে বিএনপির নেতারা সন্দেহ করছে, বিশেষ কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নেই হয়তো মাঠে নেমেছেন ড. কামাল।

গত ১১ ডিসেম্বর সিলেটে যাওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দরের লাউঞ্জে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘নির্বাচন থেকে কোন অবস্থাতেই সরে যাওয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত বিএনপি ৫০টি আসন পেলেও বিরাট অর্জন হবে। এতে তারা দল গোছাতে পারবে।’
সূত্র বলছে, ড. কামালকে বিএনপি নেতারাই আসনে বসিয়েছিল, এখন বিএনপির নেতা কর্মীরাই তাকে সন্দেহ করছে। কেউ বলছে, ‘ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেওয়ার জন্য কাজ করছেন।’ আবার কেউ বলছে, ‘ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নেই মাঠে ড. কামাল হোসেন।’ বিএনপি নেতারা যখন বলছেন, ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যখন ঐক্যফ্রন্টের নেতারাই বলছেন, ‘আংশিক নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জয় সুনিশ্চিত।’ তখন ড. কামাল হোসেনের ৫০ আসনের ফর্মুলায় বিএনপির নেতারা রীতিমতো বিব্রত।
এদিকে ড. কামালের ভক্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাদের বলছেন, ‘স্যার বয়স্ক মানুষ। অনেক কথাই বলেন চিন্তা-ভাবনা ছাড়া। এগুলো ধর্তব্যের মধ্যে না নেওয়াই ভালো। ‘কিন্তু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র বলছেন উল্টো কথা। তিনি বলেন, ‘ড. কামাল তো বঙ্গবন্ধু বলতে ভোলেন না। এটা নিশ্চয়ই বুঝে শুনে বলেছেন।’
এদিকে ৫০ আসনের তত্ত্ব নিয়ে বিএনপিতে এখন রীতিমতো গবেষণা চলছে। অনেক বিএনপি নেতা এর যোগসূত্র খুঁজছেন। ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্ট গঠন। সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি। চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ। সংলাপের নামে এলাহি নৈশভোজ। কোন দাবি আদায় ছাড়াই সংলাপ ভালো হয়েছে বলে কামাল হোসেনের ঘোষণা। আবার দ্বিতীয় দফা সংলাপ। কোন অর্জন ছাড়াই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা। নিজের (ড. কামাল) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো। যেকোন মূল্যে নির্বাচনে থাকার ঘোষণা। বিএনপির অনেক নেতাই প্রত্যেকটি ঘটনাকে পরিকল্পিত এবং দুরভিসন্ধিমূলক বলেই মনে করছেন। তারা মনে করছেন, ড. কামাল ভারত এবং আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।
আওয়ামী লীগ তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একটি সাজানো, নিয়ন্ত্রিত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চায়। এজন্য তারা ড. কামালকে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলো। হয়তো আওয়ামী লীগ তাকে ৫০ আসনের গ্যারান্টি দিয়েছে। তিনি সেটাই করেছেন। না হলে সব কিছু ভোজবাজির মতো হচ্ছে কেন?
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ‘ড. কামাল হোসেন শুধু বলেছেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো যাবে না, ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। তার মানে কি, যেকোন মূল্যে তিনি আওয়ামী লীগকে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে চান? যে নির্বাচনের ফলাফল হবে একটাই আওয়ামী লীগের জয়।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপির একজন নেতা বলেন, ‘তাহলে কি এই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট ৫০ আসন পাচ্ছে?’ বিএনপির এই নেতা প্রসঙ্গক্রমে ৮৬’র নির্বাচনের প্রেক্ষাপট এনে বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের কারণেই ৮৬’র নির্বাচনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে বৈধতা দেয়া হয়েছিল। ওই নির্বাচনের মাশুল এখনও আওয়ামী লীগকে দিতে হয়। এবার তিনি বিএনপিকেও হয়তো ৮৬- এর মডেলের নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।’

No comments:

Post a Comment