Sunday, November 11, 2018

সংলাপে খালেদা মুক্তির দায়সারা দাবি এবং নতুন বিএনপি

গত ১ নভেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে বিএনপি নেতারা বঙ্গভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে এসেছেন। সবার নেতৃত্বে ছিলেন ড. কামাল হোসেন। বিএনপির পক্ষে সেখানে গিয়েছিলেন ড. খন্দকার মোশারফ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. আব্দুল মঈন খান, জমিরউদ্দিন সরকার প্রমুখ। সেখানে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল নির্বাচন। খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ ছিল গৌণ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বৈঠক; এরপর চলে রুদ্ধদ্বার আলোচনা। দুই পক্ষের ৪৩ জন নেতার আলোচনার মধ্যেই চলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন। সাড়ে তিন ঘন্টার এই আলাপে মাত্র একবার উঠেছিল খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা। একদিন আগেও বিএনপির যে নেতারা খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যেতে চাইতেন না, গণভবনে তারা প্রায় সবাই এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন।
খালেদাকে চাইছেন না বিএনপি হাইকমান্ড ?  
গত ২০ অক্টোবর মির্জা ফখরুল ঘোষণা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া তারা কোন সংলাপে যাবেন না। দশ দিন পার হতে না হতেই মির্জা ফখরুল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনার জন্য হাজির হলেন। সংলাপে খালেদার জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ আসলেও বিএনপি নেতাদের এ ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ দেখা যায়নি।
বরং নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই বেশীরভাগ প্রশ্নোত্তর পর্ব চলেছিল বলে জানা যায়। এই প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের জানান, ‘খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের মুক্তি প্রসঙ্গ একটি দলীয় ইস্যু; জাতীয় আলোচনায় দলীয় ইস্যু উত্থাপনের সুযোগ সীমিত’।
কেঁচো খুড়তে সাপ বের হয়। সাপের সংখ্যা একাধিকও হতে পারে। খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের সঠিক কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিভিন্ন আইন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে জানা যায় যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষী, প্রমাণ এবং অভিযোগের ভিত্তি দুর্বল ছিল। যার কারণে খুব সহজেই খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড এড়ানোর সুযোগ ছিলো। কিন্তু খালেদা জিয়ার নিয়োগকৃত দলীয় আইনজীবীদের সন্দেহজনক অতিউ‌ৎসাহে মামলার রায় শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বিপক্ষে চলে যায়।
খালেদা জিয়া বাইরে থাকাকালীন সময়েই ড.খন্দকার মোশারফ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,  ড. আব্দুল মঈন খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, শওকত মাহমুদ, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আতাউর রহমান ঢালী, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল হাই শিকদার, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, এম এ কাইয়ুম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, তাজমেরী এস ইসলাম, আ ন হ আক্তার হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন রশিদসহ এক ডজন নেতার সাথে আলাদা আলাদা এবং সদলবলে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে একাধিক বৈঠকে বসার প্রমাণও পাওয়া যায়।
জানা যায়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের পরামর্শেরই বিএনপিতে জিয়া পরিবারকে মাইনাস করার কৌশল গ্রহণ করা হয়। তবে রাশিয়া এবং চীন থেকে সামরিক অস্ত্র ক্রয়ের কারণে মার্কিন প্রশাসন আওয়ামীলীগকেও ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
তারেক ক্রমশ কোনঠাসা
মার্কিন প্রশাসনের আগ্রহে দলে ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন তারেক রহমান। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর গত আগস্টে তারেক রহমানের প্রচণ্ড বিরোধীতার মুখেও দলে ফেরেন সংস্কারপন্থী ৪০০ জন নেতা-কর্মী। মির্জা ফখরুলের আগ্রহেই তারা দলে ফেরেন বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
অন্যদিকে দলীয় হাইকমান্ডের একাংশের আগ্রহে চেয়ারম্যান পদে তারেক জিয়াকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড.খন্দকার মোশারফকে বসানোর দাবি উঠেছে। এই মুহূর্তে রুহুল কবীর রিজভী এবং গয়েশ্বর রায় চৌধুরী ছাড়া জিয়া পরিবারের পাশে কেউ নেই বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নিশ্চিত করেছেন।

No comments:

Post a Comment