Saturday, November 24, 2018

ঐক্যফ্রন্টের দুর্গে তারেকের হামলা: ভারতের সমর্থন হারাচ্ছেন ড. কামাল

নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসতে পূর্ববর্তী ওয়াদা থেকে সরে আসায় দেশটির ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ড. কামাল হোসেন। ভারতের স্পষ্ট বক্তব্য ছিলো যে, ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতিতে বিএনপির বিতর্কিত নেতা তারেক রহমান কোন রকম হস্তক্ষেপ করবেন না। কিন্তু তারেক রহমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপ করায় ঐকফ্রন্টকে সকল ধরনের সুবিধা দেয়ার ঘোষণা থেকে সরে এসেছে ভারত। নির্বাচনের অন্তিম মুহূর্তে ভারতের পিছুটানে চাপের মুখে পড়েছে ড. কামাল তথা ঐক্যফ্রন্ট। তারেক রহমানের অযাচিত হস্তক্ষেপে ড. কামাল ও ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতারা নির্বাচনে নেতিবাচক ফলাফলেরও আশঙ্কা করেছেন।
ঐক্যফ্রন্ট সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন সময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একাধিক সিনিয়র নেতাও নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতা সাপেক্ষে প্রদত্ত শর্তটি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের প্রতিটি নির্বাচনী কার্যক্রমে লন্ডন থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের মতো দণ্ডিত অপরাধী দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ায় ভারত ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামালের উপর চরম ক্ষিপ্ত হয়েছে। এর জন্য ড. কামালকে নির্বাচনে কোন ধরনের সহযোগিতা না করারও হুমকি দিয়েছে ভারত।
এদিকে তারেক রহমানের বেআইনি কর্মকাণ্ডের কারণে ড. কামালসহ ঐক্যফ্রন্টের কপাল পুড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা। ভারতের চোখে, তারেক রহমান একজন অপরাধী এবং বিপথগামী রাজনীতিবিদ। তারেক রহমানকে ভরসা করে ভারত একবার ভুল করেছে কিন্তু সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি আর করতে চায় না দেশটি। এক অর্থে বলা যায়, তারেক রহমানের কারণে ঐক্যফ্রন্টের সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যেতে বসেছে। ঐক্যফ্রন্টের কোন নেতা এমনকি ড. কামালও তারেক রহমানের ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বিবেচনা করে বিষয়টি হজম করতে পারছেন না। ভারতের দৃষ্টিতে ঐক্যফ্রন্টের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছেন তারেক। তারেক রহমানের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনে কাঙ্খিত ফলাফল না পাওয়া যেতে পারে, সেটি বিবেচনা করে ড. কামালসহ ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা নিজেদের হতাশা ও বিরক্তির কথাও প্রকাশ করেছেন। তারেক রহমান এখনই নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে না নিলে ঐক্যফ্রন্টকে কোন ধরনের সুবিধা না দেওয়াও হুমকি দিয়েছে ভারত।
এই বিষয়ে ঐকফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের হঠাৎ সরব হয়ে ওঠার কারণে ঐক্যফ্রন্ট কিছুটা চাপের সম্মুখীন হয়েছে, এটি সত্য। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ভারত শুরু থেকেই তারেক রহমানকে জোট থেকে দূরে রাখার বিষয়ে শর্ত দিয়েছিল। কামাল স্যারও ওয়াদা করেছিলেন যে, ঐক্যফ্রন্টের কোন কার্যক্রমে তারেক রহমান সরাসরি জড়িত হবেন না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিটি সিদ্ধান্তে তারেক রহমান মাথা ঘামাচ্ছেন। বিষয়টি ড. কামাল ও আমাদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর। ভারতীয় দূতাবাস ১৯ নভেম্বর ড. কামালকে এই বিষয়ে সতর্ক হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। কারণ ভারত কোন সাজাপ্রাপ্ত আসামির নেতৃত্ব মেনে নেবে না, সেটি ড. কামালকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও কিছুটা চিন্তিত। শুরু থেকে ড. কামাল বিএনপি নেতা তারেককে ঐক্যফ্রন্টের কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতিতে তারেকের সক্রিয়তা বেড়েছে। রূপক অর্থে বলা যায়, নিজ ঘরে আগুন দেওয়ার খেলায় মেতেছেন তারেক। তারেক রহমানের এমন হস্তক্ষেপে ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা হতাশ ও বিরক্ত। আমি আশা করি, ঐক্যফ্রন্টের বৃহত্তর স্বার্থে তারেক রহমান বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকবেন। এই মুহূর্তে তারেকের নীরবতাই ঐক্যফ্রন্টের জন্য মঙ্গলকর।
বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম বৃহৎ দল হলো বিএনপি। তবে এটিও সত্য যে, ড. কামালদের কারণে ঐক্যফ্রন্ট আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তার কারণেই ঐক্যফ্রন্ট ভারতের আশ্বাস পেতে সমর্থ হয়েছিলো বলে আমরা মনে করি। তবে মনে রাখতে হবে, বিএনপির সকল সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার কেবল তারেক রহমানের রয়েছে। তারেক রহমানের কারণে ঐক্যফ্রন্ট যদি ভারতের চাপের মুখে পড়ে তবে বিএনপিকে দোষারোপ করাটা সমীচীন হবে না। ভারতকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব ড. কামালের। নির্বাচনের পূর্বে দলের নেতা হিসেবে তারেক রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে কোন অন্যায় করেননি। ভারতের উচিৎ বিষয়টিকে সূক্ষ্মভাবে বিবেচনা করা। আমরা তো কথা দিয়েছে, ক্ষমতায় আসলে ভারতকে সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে। নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে এসে ভারতের এমন চাপ সৃষ্টি সুবিধার লক্ষণ নয়। আমার ধারণা নতুন কোন সুবিধা আদায় করতেই ভারত এমন চাপ দিচ্ছে ড. কামালকে।

No comments:

Post a Comment