নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের ব্যয়বহুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্কাইপের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দলীয় সূত্রের খবরে জানা গেছে, চার হাজারের অধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের
মধ্যে তারেক রহমান সরাসরি মাত্র ৫০ জন প্রার্থীর স্কাইপের মাধ্যমে
সাক্ষাৎকার নেওয়ায় দলটির অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ
বিরাজ করছে।
এছাড়া যে ৫০ জন স্কাইপেতে তারেক রহমানের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন তাদের
প্রত্যেককে অতিরিক্ত ৫ লাখ টাকা করে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়েছে বলেও গুঞ্জন
উঠেছে। মাত্র পাঁচ মিনিট সরাসরি নেতার সাথে কথা বলার জন্য জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা নেওয়ার জন্য ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে।
বিএনপির গুলশান পার্টি অফিস সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ৫০ জন এলিট প্রার্থীদের স্কাইপের
মাধ্যমে সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন তারেক রহমান। ১৯ ও ২০ নভেম্বর দলটির
৫০ জন সম্পদশালী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সরাসরি সাক্ষৎকার গ্রহণ করেন তারেক
রহমান। যারা স্কাইপের মাধ্যমে সরাসরি তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎকার
দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, জহির উদ্দিন স্বপন, ডা. জাহিদ, সরদার
সাখাওয়াৎ হোসেন, শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির মতো একাধিক
সম্পদশালী ও প্রভাবশালী নেতারা। তবে তারেক রহমানের সাথে সরাসরি কথা বলার
জন্য তাদের প্রত্যেককে অতিরিক্ত ৫ লাখ করে টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে
পরিশোধ করতে হয়েছে। বাড়তি এই ৫ লাখ টাকার সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির
সিনিয়র নেতা শামসুজ্জামান দুদু। সাক্ষাৎকারের পূর্বে দুদুকে ৫ লাখ টাকা
অগ্রীম জমা দিয়ে তারপর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি কথা
বলার সুযোগ পেয়েছেন। তবে সেই ৫ লাখ টাকা অফেরতযোগ্য। মনোনয়ন পাওয়া বা না
পাওয়ার সঙ্গে এই অর্থের কোন সংযোগ নেই বলেও ৫০ জন প্রত্যাশীদের জানিয়ে দেন
দুদু।
গুঞ্জন উঠেছে, তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য এই ৫০ জন নেতা আগে
থেকেই যোগাযোগ করেছেন। তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য তারা লন্ডনে কোটি
কোটি টাকা পাঠিয়েছেন। ৫০ জনের তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য
বিষয়টি প্রথম থেকেই তদারকি করেছেন দুদু। দুদুর মাধ্যমেই লন্ডনে টাকা পাঠিয়ে
এই এলিট নেতারা তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন বলেও
গুঞ্জন উঠেছে।
এদিকে ৫০ জন পয়সাওয়ালা ও এলিট প্রার্থীদের তারেক রহমান সরাসরি
সাক্ষাৎকার নেওয়ায় অন্যান্য প্রার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র
টাকার অভাবে তারা তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ না পাওয়ায়
হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা।
তারেক রহমানের দেখা না পাওয়া বগুড়া-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা হতাশার সুরে বলেন, তারেক রহমানের সঙ্গে
সরাসরি সাক্ষাৎকারের জন্য ৫ লাখ টাকা সার্ভিস চার্জ নেওয়া হচ্ছে। মাত্র ৫০
জন এলিট প্রার্থী সে সুযোগ পেয়েছেন। আমরা অনেক আশায় ছিলাম যে, তারেক
রহমানের সঙ্গে স্কাইপেতে কথা বলবো। কিন্তু পাঁচ মিনিটের জন্য ৫ লাখ টাকা
দেওয়াটা বিলাসিতা মনে হয়েছে আমার কাছে। এরপরও আমি কষ্ট করে টাকা ম্যানেজ
করে দুদু ভাইকে অনুরোধ করেও সুযোগ পাইনি। দুদু ভাই জানিয়েছেন, তারেক স্যার
নাকি ৫০ জনের চেয়ে বেশি কারো সঙ্গে কথা বলবেন না। বিষয়টিতে অনেক মনোনয়ন
প্রত্যাশী নেতারা কষ্ট পেয়েছেন। বিগত ১০ বছরের বেশি সময় দলের জন্য
আন্দোলন-সংগ্রাম, জেল-জরিমানা সহ্য করে তারেক স্যারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ
হলো। বিষয়টি অনেক হতাশাজনক। রংপুর, দিনাজপুরের একাধিক প্রার্থীর সঙ্গেও
আমি আলাপ করেছি। তারাও তারেক রহমানের এমন পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণে দু:খ
পেয়েছেন। একটি ল্যাপটপ দিয়ে মাত্র পাঁচ মিনিট কথা বলার চার্জ ৫ লাখ টাকা।
বিষয়টি হাস্যকর। তাহলে আমরা ধরে নিচ্ছি ৫০ জন এলিট প্রার্থীর বাইরে
অন্যান্য নেতারা তারেক রহমানের কাছে জরুরি নন। সারাজীবন বিএনপি রাজনীতি করে
এমন অভিজ্ঞতার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। বিএনপিকে চাঙ্গা করতে হলে
তারেক রহমানের এমন একপেশে মনোভাব দূর করা উচিত বলে আমি মনে করি। আর কত রকম
কাজের জন্য আমাদের মত সাধারণ নেতাদের নামে-বেনামে দলকে সার্ভিস চার্জ দিতে
হবে! বিষয়টি হতাশাজনক।
No comments:
Post a Comment