নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতিতে বাড়ছে অনিশ্চয়তা, ক্ষমতার
প্রভাব, জোট গঠন ও জোটের ভেতরে থেকে স্বেচ্ছাচারিতার মত নানা সমীকরণ ও
গুঞ্জন । বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে গড়ে ওঠা সরকার বিরোধী জোট জাতীয়
ঐক্যফ্রন্টে প্রভাব বিস্তার ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ড. কামালদের
সাথে একধরনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে জোটে বিএনপির ছায়ায় লুকায়িত জামায়াত।
জামায়াতের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা মহাবিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ বলে জোটের সূত্রগুলো জানিয়েছে।
ঐক্যফ্রন্ট সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সম্মুখে এসে জামায়াত
জোটের চালিকাশক্তিতে পরিণত হওয়ার যে প্রয়াস চালাচ্ছে, তাতে বিরক্ত জোটের
অন্যান্য দলগুলো।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াত দলহারা হয়ে বিএনপির ঘাড়ে চেপে জোটে
তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে সব পরিকল্পনায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে
বলে করেন জোটের অন্যতম দল গণফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী।
তিনি বলেন, জামায়াত কৌশলে ঐক্যফ্রন্টে প্রবেশ করে জোটকে নিজেদের আদর্শে
পরিচালিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের কিন্তু শুরু থেকেই জামায়াতকে নিয়ে
সন্দেহ ছিল। ড. কামাল হোসেন জামায়াতকে জোটে নিতে চাননি শুরু থেকে। কিন্তু
লন্ডনের ফোনের কারণে এবং নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের রাজনীতি সামাল দেওয়ার জন্য
বাধ্য হয়ে জামায়াতকে জোটে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সেই জামায়াতের কিন্তু
নিবন্ধন পর্যন্ত বাতিল হয়ে গেছে। তাদের শিকড় কেটে ফেলা হয়েছে। অথচ তাদের
ক্ষমতার মিথ্যা প্রভাব দেখানোর অভ্যাস এখনো যায়নি। জামায়াতের অবস্থা জলে
ভাসা কচুরিপানার মতো। আমি বিভিন্ন জায়গায় শুনেছি, জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা
হচ্ছে, ঐক্যফ্রন্টকে নাকি কৌশলে টিকিয়ে রেখেছে জামায়াত। ঐক্যফ্রন্টের
যাবতীয় সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ের ব্যয় নাকি তারা বহন করছে। বিষয়টি মিথ্যাচার
ছাড়া কিছুই নয়। ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে ড. কামালের একান্ত প্রচেষ্টায়।
ক্ষমতার বাহাদুরি নয় ড. কামাল হোসেন বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির চর্চা করেন।
জামায়াত হলো মাথামোটা, ষড়যন্ত্রকারীদের সংগঠন। এদের দ্বারা দেশের উন্নয়ন
সম্ভব নয়। ঐক্যফ্রন্ট চলে ড. কামালদের নির্দেশনায়। দেশ বিরোধী নিষিদ্ধ কোন
দল এখানে পাত্তা পাবে না। এটা জামায়াতের মনে রাখা উচিত। ঐক্যফ্রন্টে
স্বাধীনতার পক্ষের দলগুলোর বেশি প্রভাব রয়েছে। আমরাই ঐক্যফ্রন্টের
কাণ্ডারি, এটি জামায়াতকে মনে রাখতে হবে।
বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর
রহমান মান্না বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্টে কে বেশি প্রভাবশালী
বা কোন দল কতটা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী, সেটির পরীক্ষা করাটা বোকামি।
জামায়াত আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল। তবে জামায়াতের রিজার্ভ
ভোটব্যাংক আছে। এছাড়া মাঠের রাজনীতিতে ঐক্যফ্রন্টের অনেক দলের চেয়ে
শক্তিশালী জামায়াত। তবে তাদের গোড়া কেটে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন কিছুটা
পরগাছার মত হয়ে পড়েছে। জামায়াত বিএনপির ছায়ায় নিজেদের দানব ভাবতে শুরু
করেছে। সেটি তাদের ভুল হবে। কারণ জামায়াতের গায়ে কলঙ্কের দাগ আছে। সুতরাং
জোটে থাকতে হলে অপরাধ, অপকর্ম মেনে নিয়ে ড. কামালের সিদ্ধান্তে পথ চলতে
হবে। এখানে ক্ষমতা দেখানোর কিছু নেই। ঐক্যফ্রন্ট পছন্দ না হলে জামায়াত
যেকোন মুহূর্তে জোট থেকে বের হয়ে যেতে পারে। আমরাও চাই না কেউ আমাদের
পাকিস্তান ও যুদ্ধাপরাধীদের দালাল বলে গালি দিক।
No comments:
Post a Comment