Saturday, September 22, 2018

সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার

সম্প্রতি প্রচার মাধ্যমে বাংলাদেশ এর প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ প্রচারিত হয়। ন্যায় বিচার দেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার। একটি দেশের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সেই সাথে দেশের শান্তিকামী আপামর জনসাধারণকে উদ্বিগ্ন করে।
গত ১০ আগষ্ট ২০১১ তারিখে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সংরক্ষিত কোটা হতে তিন কাঠা আয়তনের একটি প্লট মাননীয় প্রধান বিচারপতির ভাই নরেন্দ্র কুমার সিংহ’র নামে বরাদ্দ দেয়। পরবর্তীতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে (রহস্যজনক কারনে) এবং রাজউকের ০২/২০১২ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তিন কাঠা প্লটটি পরিবর্তন করে পাঁচ কাঠায় পুনঃবরাদ্দ করা হয় (সেক্টর-২০, রোড-২১৭, প্লট-১৪)।
সংরক্ষিত কোটা থেকে প্রধান বিচারপতির ভাইকে প্লট বরাদ্দকরণ এবং এর আয়তন বৃদ্ধির বিষয়টি প্রশ্ন সাপেক্ষ যা বিচারপতি কর্তৃক নেপথ্য প্রভাব বিস্তারের ইঙ্গিত বহন করে। আরো বিস্ময়কর যে, গত ৩০ জুলাই ২০১৩ তারিখে রাজউক উক্ত প্লটটি পুর্বাচল হতে পরিবর্তন করে উত্তরার ০৪ নম্বর সেক্টরের প্রাণকেন্দ্রে ৫ কাঠা আয়তনের রোড-০৬, প্লট-১/এ বরাদ্দ করে। রাজউকের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গিয়েছে যে উত্তরা রাজউকের মাস্টার প্ল্যানে উক্ত ১/এ নামে কোন প্লট ইতোপূর্বে ছিল না।
কিন্তু মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেপথ্য প্রভাবে তাঁর ভাই নরেন্দ্র কুমার সিংহকে অধিক মূল্যমান সম্পন্ন এলাকায় প্লট প্রদানের জন্য ওয়াসা’র ১ নং প্লটটিকে দ্বিখণ্ডিত করে ১/এ প্লটটি সৃষ্টি করে অনৈতিকভাবে তাঁকে এই প্লটটি বরাদ্দ করা হয়। এই প্রক্রিয়া বিশ্লেষণে প্রধান বিচারপতির ক্ষমতার অপব্যবহারের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। নরেন্দ্র কুমার সিংহ ইতোপূর্বে তাঁর নিকটাত্মীয় শংখজিত সিংহকে প্লটটির জন্য আমমোক্তারনামা প্রদান করে। পরবর্তীতে ২০ জুলাই ২০১৭ তারিখে রাজউক উক্ত প্লট সংলগ্ন অতিরিক্ত ২৫০ বর্গফুট জমি শংখজিত সিংহকে বরাদ্দ করে।
বর্তমানে উক্ত প্লটে ৯ তলা ভবন নির্মান কাজ প্রায় সমাপ্ত। বাড়ীতে কর্মরত ঠিকাদার এবং শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে,  উক্ত বাড়ীটির মালিক মাননীয় প্রধান বিচারপতি এবং তাঁর ভাতিজা বিশ্বজিৎ কুমার সিংহ। এছাড়াও মাননীয় প্রধান বিচারপতি তাঁর সর্বশেষ (২০১৬/২০১৭ বছরের) আয়কর রিটার্ণে তাঁর ভাইয়ের নামে বরাদ্দকৃত প্লটের উপর নির্মিত এ বাড়ীটি নিজের নামে দেখিয়েছেন যা প্রমান করে তিনি নিজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওয়াসার জমির অর্ধাংশ প্লট আকারে বরাদ্দ করান।
নয় তলা (নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্ত) এই বাড়িটির মূল্য মাননীয় প্রধান বিচারপতি তাঁর আয়কর রিটার্ণে মাত্র ২ কোটি ২ লক্ষ টাকা দেখিয়েছেন, যার সরেজমিনে মুল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা বলে জানা যায়। ব্যাক্তিগত সম্পদের হিসাব আয়কর রিটার্ণে যথাযথভাবে উল্লেখ না করা একটি গুরূতর অপরাধ।
উপরোক্ত অভিযোগ সমুহের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র নৈতিকতার স্খলন জনিত বিষয়টি প্রতিফলিত হয়।
মহাত্মন, প্রধান বিচারপতি একজন ব্যক্তি নয়, একটি দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। এরুপ মহান প্রতিষ্ঠানে এরুপ বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিযুক্ত রাখলে দেশের মানবতা ও সুশাসন প্রত্যাশী লাখো মানুষ মর্মাহত হবে, লঙ্ঘিত হবে সংবিধানের মৌলিক অধিকার।

No comments:

Post a Comment