দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে অবৈধ অর্থ সম্পদ উপার্জনে ব্যস্ত
হয়ে উঠেছিল ২০০১-০৬ শাসনামলের চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী-আমলারা। জনগণের
সেবার নামে নিজেদের পকেট ভরতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে তারা, গড়েছিলো অবৈধ সম্পদের
পাহাড়।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে সাদেক হোসেন
খোকাকে করা হয় মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী। এরপর কার্যত ভোটারবিহীন
নির্বাচনে ঢাকার মেয়রও নির্বাচিত হন। একাধারে মন্ত্রী ও মেয়র হিসেবে দুই
বছরের অধিক সময় পার করেন তিনি। এরপর মেয়র হিসেবে আট বছর। আশির দশকে ঢাকার
ওয়ার্ড কমিশনার হিসেবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরুর পরে ধাপে ধাপে বাংলাদেশের
ক্ষমতার রাজনীতিতে তার প্রবেশ অনেকটা নাটকীয়ভাবেই।
২০০১ সালের মন্ত্রিত্ব লাভ ও মেয়র হওয়ার পর সাদেক হোসেন খোকা বদলে যেতে
শুরু করেন। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত রাজনৈতিক জীবনে যতটা না আর্থিকভাবে
সাদেক হোসেন খোকা ফুলে ফেঁপে উঠেছেন তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি সম্পদের নেশা
তাকে পেয়ে বসে ২০০১ সালের পর।
নামে-বেনামে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন- এই আলোচনা বিএনপির মধ্যেই
রয়েছে। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও তার সম্পদ আছে বলে কানাঘুষা বিভিন্ন
মহলে। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিংহভাগ মন্ত্রী,
মেয়র দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের শিকার হলেও তিনি কিভাবে নিজেকে রক্ষা
করেছিলেন তা নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। ওই সময়ে বিএনপির ভেতরে সংস্কারপন্থিদের
আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার ব্যাপারে তিনি যেমন একধাপ এগিয়ে ছিলেন তেমনি লোকবল
দিয়েও সাহায্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে বিএনপির ভেতরেই। দলের প্রতি তার এই
অবিশ্বস্ততা নিয়ে বিএনপির ভেতরে নানা কথা হয়েছে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রায় ৮০ কাঠা জমি, স্বদেশ প্রোপার্টিজে বেনামে
বিপুল বিনিয়োগ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বেনামে বিপুল ভূ-সম্পত্তি গড়ে তোলাসহ
সম্পদ অর্জনের নেশা সাদেক হোসেন খোকার রাজনৈতিক চরিত্রের বৈশিষ্ট্যকে
ভিন্নমাত্রা দিয়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠরাই আড়ালে আবডালে আলোচনা করেন। বনানী
সুপার মার্কেটকে নামমাত্র মূল্যে ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে দেয়া, সিটি
কর্পোরেশনের বহু মূল্যবান জমি ডেভেলপারকে অধিক সুবিধায় পাইয়ে দিয়ে
ভিন্নপথে নিজে ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার। আর
এভাবেই আপাদমস্তক রাজনীতিক সাদেক হোসেন খোকা কার্যত বেনিয়ায় পরিণত হন।
২০০৭ সালে ৬ ডিসেম্বর সাদেক হোসেন খোকা ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা
সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। কিন্তু তদন্ত করে ৯ কোটি ৭৬ লাখ ২৮ হাজার ২৬১
টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ৬০৯ টাকার
সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর খোকার ১৩ বছরের
কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানার রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩। একই
সঙ্গে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা দখলেও নেয়া হয়েছে। সাদেক
হোসেন খোকা বর্তমানে বিদেশে পলাতক। তাকে দেশে এনে আইনের আওতায় আনার দাবি
এখন সকলের।
No comments:
Post a Comment