Tuesday, January 15, 2019

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুনরায় ছয় গ্রেডে বেতন বেড়েছে পোশাক শ্রমিকদের

গত ২৫ নভেম্বর পোশাক খাতে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল সেটা বাস্তবায়ন হলে ‘বেতন আগের থেকেও কমে যাবে’ এমন গুজবের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের পরপরই সপ্তাহ জুড়ে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছিল পোশাক শ্রমিকরা। এই গেজেটকে ‘বেতন বৈষম্য’ আখ্যা দিয়ে তাদের দাবি ছিল মজুরি বৈষম্য দূর করে নতুন মজুরি কাঠামো দেয়া। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পোশাক শ্রমিক, মালিকদের সাথে সমন্বয় করে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের ওই বেতন কাঠামো পর্যালোচনা ও যৌক্তিক বেতন বৃদ্ধির নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই পোশাক শ্রমিকদের বেতন কাঠামোয় সৃষ্ট সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও দ্রুত সমাধানের বিষয়ে পর্যালোচনা করে সপ্তম গ্রেড ছাড়া বাকিগুলোতে সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫.৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে মালিক, শ্রমিক এবং সরকারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে। রোববার নতুন করে ঘোষিত এই বেতন কাঠামোতে ১৫ থেকে ৭৮৬ টাকা পর্যন্ত বেতন বেড়েছে।
একইসাথে নতুন বেতন কাঠামোতে চিকিৎসা, যাতায়াত, বাড়িভাড়া বাড়ানো ছাড়াও মূল মজুরির সঙ্গে পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। এই নতুন কাঠামো ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। বাড়তি মজুরি ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হবে।
শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরির কয়েকটি গ্রেডে আশানুরূপ মজুরি বৃদ্ধি না পাওয়ায় পোশাক শিল্পের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার গ্রেডগুলোর মজুরি সমন্বয় করেছে বলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া নতুন বেতন কাঠামোকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে গত সপ্তাহের শুরু থেকে লাগাতার আন্দোলনে পোশাক শ্রমিকরা। আর রাস্তায় নেমে তাদের আন্দোলনের কারণে প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে।
লাগাতার এই আন্দোলনের মুখে গত ৮ জানুয়ারি বেতন কাঠামো পর্যালোচনায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের প্রতিনিদি নিয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়। গত ১০ জানুযারি বৃহস্পতিবার কমিটির প্রথম বৈঠকে তিনটি গ্রেডের বেতন কাঠামো নিয়ে ত্রুটি চিহ্নিত করে রবিবার আবার বৈঠকের সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানানো হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামোর সাতটি সাতটি গ্রেডের মধ্যে ছয়টিতেই বেতন বেড়েছে। তবে ন্যূনতম বেতন আগেই মতোই আট হাজার টাকা রয়েছে। আর বেতন বেশি বেড়েছে প্রথম থেকে তৃতীয় গ্রেডে জ্যেষ্ঠ শ্রমিকদের।
এদিকে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, পোশাক কর্মীরা সোমবার থেকে কারখানায় কাজ না করলে তাদের কোনো মজুরি দেওয়া হবে না (নো ওয়ার্ক নো পে)। একইসঙ্গে ওই কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এক নজরে পোশাক শ্রমিকদের চূড়ান্ত সাতটি বেতন কাঠামো:
প্রথম গ্রেডের একজন কর্মী সর্বমোট ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা বেতন পাবেন। যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ছিল ১৩ হাজার টাকা এবং ২০১৮ সালের নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে ১৭ হাজার ৫১০ টাকা করা হয়েছিল। অর্থাৎ পর্যালোচনা করার পর বেতন বেড়েছে শতকরা ৪.২ শতাংশ বা ৭৪৭ টাকা।
দ্বিতীয় গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা। যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ১০ হাজার ৯০০ টাকা এবং ২০১৮ সালের নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা করা হয়েছিল। অর্থাৎ পর্যালোচনার পর শতকরা ৫.৩ শতাংশ বা ৭৮৬ টাকা বেড়েছে।
তৃতীয় গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা। যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ৬ হাজার ৮০৫ টাকা এবং ২০১৮ সালের নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে ৯ হাজার ৫৯০ টাকা করা হয়েছিল। অর্থাৎ পর্যালোচনার পর শতকরা ২.৬ শতাংশ বা ২৫৫ টাকা বেড়েছে।
চতুর্থ গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা। যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ৬ হাজার ৪২০ টাকা এবং ২০১৮ সালের নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে ৯ হাজার ২৪৫ টাকা করা হয়েছিল। অর্থাৎ পর্যালোচনার পর শতকরা ১.১ শতাংশ বা ১০২ টাকা বেড়েছে।
পঞ্চম গ্রেডে সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮৭৫ টাকা। যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ৬ হাজার ৪২ টাকা এবং ২০১৮ সালের নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা করা হয়েছিল। অর্থাৎ পর্যালোচনায় শতকরা ০.২২ শতাংশ বা ২০ টাকা বেড়েছে।
ষষ্ঠ গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪২০ টাকা। যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ছিল ৫ হাজার ৬৭৮ টাকা এবং ২০১৮ সালে নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে ৮ হাজার ৪০৫ টাকা করা হয়েছিল। অর্থাৎ এই গ্রেডে পর্যালোচনায় শতকরা ০.১৭ শতাংশ বা ১৫ টাকা বেড়েছে।
তবে বাড়েনি সপ্তম গ্রেডের মজুরি। যেখানে ২০১৮ সালের গেজেটের মতই সর্বনিম্ন মজুরি ধরা হয়েছে সব মিলিয়ে আট হাজার টাকা। যা ২০১৩ সালের কাঠামোতে সর্বনিম্ন ছিল ৫৩০০ টাকা।

No comments:

Post a Comment