Friday, January 18, 2019

তারেকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর

নিউজ ডেস্ক: এবার তারেক রহমানের অবৈধ রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর। বাংলাদেশের আদালতে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়ে তারেক রহমান রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে ব্রিটিশ সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলেই মনে করছে লন্ডনের পররাষ্ট্র দপ্তর।

জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য যে আবেদন করা হয়েছে, সেই আবেদনে পাঁচটি যুক্তি উত্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের সরকারের এই আবেদন এবং যুক্তিগুলোর ব্যাপারে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর তদন্ত শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্য বিএনপির এক বহিষ্কৃত নেতা জানান, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি তারেকের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সত্যতা খতিয়ে দেখছে। তারেক রহমান যেহেতু দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি তাই তার রাজনৈতিক আশ্রয় সম্পূর্ণ অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পক্ষে পাঁচটি যুক্তি উত্থাপন করে ব্রিটিশ সরকারের কাছে একটি আবেদন দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার এই আবেদনের প্রেক্ষিতে একটা শুনানি করেছিল। সেই শুনানিতে তারেক রহমান ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত না হয়ে, তার আইনজীবীর মাধ্যমে রাজনৈতিক আশ্রয়ের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এরপর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তারেক রহমান কেন রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য নন, তার পক্ষে আবার পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়। এখন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই সাব কমিটি দুই পক্ষের বক্তব্যের আলোকে সত্যাসত্য যাচাই করবে। সত্যাসত্য যাচাইয়ের পর যে রিপোর্ট দিবে, সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই তারেকের রাজনৈতিক আশ্রয় এবং যুক্তরাজ্যে থাকা না থাকা নির্ভর করবে।
তথ্যসূত্র বলছে, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। ২০১৩ সালে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দেন। শুধু তারেক রহমান-ই নন, তার স্ত্রী এবং কন্যা জাইমা রহমানও পাসপোর্ট জমা দেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে প্রথম তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ওই আবেদনকে আমলে নেয়নি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য পুন:আবেদন করা হয়। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত বছর যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপরে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তারেক কেন রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের যোগ্য নন এ ব্যাপারে ৫ টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানানো হয়েছে, তারেক একজন দণ্ডিত অপরাধী। কাজেই কোন দণ্ডিত অপরাধী যুক্তরাজ্যে থাকতে পারেন না। এছাড়াও তারেক রহমান রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের জন্য যে তথ্য দিয়েছেন তা অসত্য। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য তার রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করা উচিত।
এদিকে এক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তারেক রহমান জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদীদের মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত। লন্ডনে থেকে সে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তারেক রহমান ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেডের খাতায় লাল তালিকাভুক্ত আসামি এবং বাংলাদেশ থেকে পলাতক। কাজেই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর গুরুত্বও রিপোর্টে উঠে আসে।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, তারেক রহমান লন্ডনে বসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত করছে। কাজেই বাংলাদেশ বা কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী ব্রিটেনে আশ্রয় লাভের যোগ্যতা রাখে না।
প্রসঙ্গত, তারেক রহমানের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তার প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুটি মামলার রায় হয়েছে। দুটির কোনটিতেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি। এই দুই মামলায় তার সাত বছরের দণ্ড দিয়েছে উচ্চ আদালত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে নিম্ন আদালত। এই প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তি যাচাই-বাছাই করে দেখছে এবং সাধারণত তারা ৩০ কর্ম-দিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। এই নিষ্পত্তির পরেই বোঝা যাবে যে তারেক রহমানকে কবে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।

No comments:

Post a Comment