Tuesday, March 5, 2019

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত জামায়াত!

নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে প্রকাশ্যে বিভাজিত হয়ে পড়েছে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। সূত্র বলছে, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদসহ শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা গ্রেফতার হলে নেতৃত্ব সংকটসহ নানা কারণে সংগঠনটির মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শূরার একজন সদস্য বলেন, দলীয় ফোরামে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর সময়ে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা তাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়াসহ সংস্কার প্রস্তাব দেন। পরে জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দলের তরুণ নেতৃত্বের একটি অংশ নতুন করে ওই প্রস্তাব ও আলোচনা সামনে আনে। এর আগে ২০০১ সালে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও ২০১০ সালে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কারাগার থেকে চিঠির মাধ্যমে প্রায় একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যা আমলে নেয়নি জামায়াতের কট্টরপন্থী নেতারা।
সূত্রমতে, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে তাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে মকবুল আহমাদ ও ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি গঠন সম্পূর্ণ লোক দেখানো পরিকল্পনা। নেতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ব্যারিস্টার রাজ্জাককে বর্তমান কমিটিতে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদ ঘোষণা দেওয়া হয়নি এটিও স্পষ্ট। তা নিয়ে তার অনুসারী আইনজীবীরা ওই সময়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে তার ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াত। জামায়াতের এক নেতা জানান, যদিও ওই সময়ে দলের গঠনতন্ত্র না মেনে আমির মকবুল আহমাদ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে মজলিশে শূরা সদস্য মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, মকবুল আহমাদ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়ার অধিকার রাখেন না। তাই দলীয় ফোরামে এই ভারপ্রাপ্ত আমিরকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। জামায়াতে যা হচ্ছে সব কিছুর জন্য দায়ী বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানই।
এদিকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলেও তা দৃশ্যমান না হওয়ায় বরাবরই দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ‘জামায়াত ঐক্যবদ্ধ’। দীর্ঘদিন ছাইচাপা দিয়ে রাখতে পারলেও দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবার প্রকাশ্যে এসেছে। দলটির অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সংগঠন থেকে পদত্যাগ করার পরই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শুধু রাজ্জাকই নন, অনেক নেতাই এই দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন কারণে নিষ্ক্রিয় অথবা দল ছেড়ে দেবেন বলে তথ্য রয়েছে।
অবশ্য গণমাধ্যমকে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেছেন, নতুন কোনো দল তিনি গঠন করছেন না। দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের বিজয়ের পর তৎকালীন দলের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক একাত্তরের মূল্যায়ন ও ভুল স্বীকার করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব দেন। সত্তর দশকের শেষভাগ থেকে যারা ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাদের অনেকের বিবেচনায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার জন্য জামায়াতের ভুল স্বীকার করা উচিত। এ অংশটি মনে করে, একাত্তরে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থাকার পরও তাদের ভুলের দায় আর বহন না করাই উত্তম। তারা মনে করেন, ২০০১ সালে দেওয়া ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের প্রস্তাব মানলে জামায়াতকে এত বড় বিপদের মুখে পড়তে হতো না। যদিও আবদুর রাজ্জাকই যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী ছিলেন।
যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ার ৫ দিনের মাথায় তিনি দেশ ছাড়েন। এ নিয়ে তখন নানা অভিযোগ উঠেছিল খোদ দলটির ভেতর থেকে।
তথ্যসূত্র বলছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রায় ৯ বছর আগে, ২০১০ সালে গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিন পর কারাগার থেকে দেওয়া এক চিঠিতে প্রস্তাব করেছিলেন, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন দায়িত্বশীলদের হাতে জামায়াতকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি একাধিক বিকল্পের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী নামও বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারসহ তখনকার সিনিয়র নেতাদের বাধার কারণে সেটা আর এগোয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত জামায়াত এখন অস্তিত্ব সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে বলেই মনে করছেন দলটির সাধারণ কর্মীরা।

No comments:

Post a Comment